টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ শনিবার, ৪ মে অনুষ্ঠিত হলো বাক্কো মেম্বারস মিট ২০২৪ এবং ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’ তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৯০ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সংগঠন।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ সংগঠনটি সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করার জন্য বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও আয়োজন করেছে “মেম্বারস মিট ২০২৪” শীর্ষক একটি প্রীতি সম্মিলনী।
বাক্কোর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যদের আনুষ্ঠানিক অভিষেকে ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে ডিজিকন টেকনোলজিস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরীফ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফিফোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজধানীর সেলিব্রিটি কনভেনশন হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের শক্তি ও প্রযুক্তির ব্যবহার করছে আমাদের কল সেন্টার এবং আউটসোর্সিং উদ্যোক্তারা। ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক ৩৩৩ থেকে প্রায় ৮ কোটি মানুষ সেবা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও ৯৯৯, ১৬২৬৩ কল সেন্টারে আমাদের তরুণ-তরুণীরা কাজ করছে এবং সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আগামী ১৭ বছরে বাক্কো’র সদস্য ও উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন খাতে সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে ব্যবসায়ের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পলক বলেন, আমরা ‘সীড’ শিরোনামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি যেখানে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে কমপক্ষে ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্মার্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আমরা ৫৫৫টি জয় সেট সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছি যেখান থেকে তরুণ-তরুণীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ৫ বছরে নতুন করে আইটি খাতে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। সাথে সাথে আমরা আমাদের রপ্তানি আয়কে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই । আমরা মনে করি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রযুক্তি শিল্পই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, বিপিও শিল্পের অভিলক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় অর্জন ও ১ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি । এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকল প্রতিবন্ধকতা হতে উত্তরণে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আশা করছি, ২০২৪ – ২০২৬ মেয়াদের এই নবনির্বাচিত কমিটি এই শিল্পের সম্প্রসারণে তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করি তাহলে অচিরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’বিনির্মাণ করা সম্ভব ।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পখাতের উপরে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্তর্ভুক্ত শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)’, যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে সেবা রপ্তানির মাধ্যমে বছরে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আহরণকারী নিয়ত-বর্ধনশীল এক শিল্পক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিপিও শিল্পে বর্তমানে কর্মরত জনসম্পদের সংখ্যা ৮০০০০+; যার ৪০ শতাংশই নারী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি বলেন, “বাক্কোর নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে অভিনন্দন। বিপিও শিল্পের সম্প্রসারণে বিটিআরসি তার সর্বাত্মক সহযোগিতা অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, সবাই সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করে গেলে প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’লক্ষ্যমাত্রা সফল করা সম্ভব”।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাক্কো আয়োজন করে সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভা। আলোচনায় বিপিও ইন্ডাস্ট্রি সম্প্রসারণের পথে বিদ্যমান সকল প্রতিবন্ধকতা হতে উত্তরণের উপায়, কর্মীসংস্থান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রযুক্তির সংস্থায়ন, ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নানাবিধ সমস্যার সমাধানে করণীয় সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।