টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অনুমোদিত খসড়ায় ডজনের বেশি নতুন সংজ্ঞা যুক্ত এবং ৪টি অপরাধকে অজামিনযোগ্য করে হালনাগাদ করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে পূর্ববর্তী আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা।
যদি কোনো মতামত থাকে তা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনলাইনে যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। মতামত পাঠাতে হবে [email protected] I 1rf.sec@ict. gov.bd ই-মেইল ঠিকানায়।
২২ জানুয়ারি, বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে আনা পরিবর্তনগুলো তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
নতুন খসড়ায় বিতর্কিত সাইবার বুলিংয়ের বিধান বাদ পড়েছে। তবে যুক্ত হয়েছে জাতীয় পতাকা বা জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে প্রচারণার শাস্তির বিধান। এ ছাড়া বেআইনি প্রবেশ বা হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিধান করার পাশাপাশি অধ্যাদেশের ২৫ এর ৩ এ নারী ও শিশু সাইবার অপরাধকে শাস্তিযোগ্য করাসহ আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) নাগরিক সমাজের পরামর্শে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার পর এ হালনাগাদ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ করে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় বিগত হাসিনা সরকার। এবার সেই আইন বাতিল করে এরই মধ্যে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। বলা হচ্ছে আগের সরকারের করা আইনের ২০, ২১, ২৪, ২৫, ২৯ সহ ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি নীতি উপদেষ্টা ফাইয়াজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, গত সরকারের আমলে বানানো সাইবার সিকিউরিটি আইনে করা মামলার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আসামি শিগগিরই খালাস পাচ্ছেন।গণমাধ্যমসহ সব পেশাজীবীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেবে নতুন অধ্যাদেশ। তবে, চারটি অপরাধকে রাখা হয়েছে জামিন অযোগ্য হিসেবে।
ফাইয়াজ আহমেদ বলেন, এই অধ্যাদেশ পূর্ববর্তী নিপীড়নমূলক আইনের অপরাধবোধের দায়মুক্তি দিতে সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে কোনো সরকার যাতে এই আইনকে কালাকানুন হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে দিকটায় নজর দেওয়া হয়েছে। এটা যেন নিবর্তনমূলক না হয় সে জন্য সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এই আইনে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে এআই, মেশিন লার্নিং, ম্যালওয়ার এজেন্সিকে সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে এটি প্রযুক্তি নিরপেক্ষ হয়। এই আইনে রিভেঞ্জ পর্নোকে অপরাধ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান ফয়েজ আহমেদ। এ সময় সরকারের অনুরোধে কোনো কন্টেন্ট ব্লক করা হলে তার তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
আইসিটি নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এই আইন বাংলাদেশের সব পেশাজীবীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। শব্দ চয়নে বিতর্কিত বিষয়গুলোকে সতর্কতার সঙ্গে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। আগামীতেও কোনো সংযোজন-বিয়োজন করার প্রয়োজন হলে তা করা হবে ।
নতুন অধ্যাদেশ ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে, সাইবার স্পেসে ঝুঁকি মোকাবিলার উদ্যোগ স্পষ্ট করা হয়েছে, যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, কনটেন্ট ব্লকের দিক থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কারণে ব্লক করার কারণ জানানোর বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, তল্লাশির স্বার্থে জব্দ করা জিনিসপত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে, জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে কিছু প্রকাশ করা যাবে না, এমন অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশের সুপ্রশস্ত সাইবার স্পেসকে সুরক্ষায় করা অধ্যাদেশটি যেন নিবর্তনমূলক না হয় সে বিষয়ে লক্ষ রাখা হয়েছে। তবে সংস্কারের মানসিকতায় এটি নিয়মিত হালনাগাদ হতে পারবে। পেনাল কোডে যেসব বিষয় আছে, তা এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজিডি গভসার্ট প্রকল্পের অধীনে যে কাজ চলছে, তার বাইরে জনপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সিকে আরও কার্যকর করতে অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের পর এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
নতুন খসড়ায় যুক্ত করে বলা হয়েছে, ডিজিটাল, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কোনো প্রোপাগান্ডা, প্রচারণা চালালে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
গত ২৪ ডিসেম্বর অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন হয়। সরকার বলেছিল, এ অধ্যাদেশ দ্বারা সাইবার স্পেস এবং একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হবে।
কিন্তু অনুমোদিত খসড়াটি নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়। সেখানে ধারা ২৫-এ সাইবার বুলিংয়ের নামে একটি বিধান ছিল। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট বা সাইবার স্পেসে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান বা হয়রানি করা, মিথ্যা বা ক্ষতিকর তথ্য, অপমানজনক বার্তা, গালিগালাজ, গুজব বা মানহানিকর কনটেন্ট ছড়ানোর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সুনাম বা মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল।
নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পক্ষ থেকে এই বিধানের বিরোধিতা করে বলা হয়, এতে বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এবার ‘সাইবার বুলিং’ বাদ দেওয়া হয়েছে।
সুত্র দেশ রুপান্তর