টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : ৭৪টি ডিজিটাল প্রচারণাকে ২৪টি ক্যাটেগরিতে পুরস্কৃত করা হয়েছে। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ আয়োজন ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ডের ৮ম সংস্করণ।
প্রায় ৫০০ জন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীদের উপস্থিতিতে একটি গালা আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ী ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা গুলোকে পুরষ্কৃত করা হয়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রচারণা নিয়ে প্রচলিত একমাত্র সম্মাননা হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড।
উল্লেখ্য যে, নভেম্বর ১, ২০২৩ থেকে অক্টোবর ৩১, ২০২৪ এর মধ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় প্রচারণাগুলো মনোনয়নের যোগ্যতা লাভ করে। এই বছর পুরস্কারের জন্য ১০৫৭টি মনোনয়ন জমা পড়ে। মনোনয়ন গুলোকে -শর্টলিস্টিং এবং গ্র্যান্ড জুরি- এই দুইটি পর্যায়ে বাছাই করেন দেশের শীর্ষ ক্যাটেগরি বিশেষজ্ঞদের একাধিক দল। শর্টলিস্টিং পর্যায়ে ১০টি জুরি সেশনে ১০৩ জন বিশেষজ্ঞ প্রাথমিক মনোনয়ন গুলোকে বাছাই করেন। পরবর্তীতে আরো ৭টি গ্র্যান্ড জুরি সেশনে ৯০ জন জুরি অধিকতর যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ী প্রচারণা গুলো নির্ধারণ করেন।
২৪টি পৃথক ক্যাটেগরিতে চারটি র্যাংকে চূড়ান্ত বিজয়ীরা পুরস্কৃত হন। এ বছর ৪৭ টি ব্রোঞ্জ, ২৪ টি সিলভার, ৩ টি গোল্ড পদক প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ডের এই বছরের আসরে কোনো গ্র্যাঁ পি বিজেতা ছিলো না।
উদ্বোধনী বক্তব্যে, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের গ্রুপ সিইও এবং এক্সিকিউটিভ এডিটর, সাজিদ মাহবুব বলেন, “আমরা বর্তমানে একটি ডিজিটাল বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে মার্কেটিং শুধু গল্প বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি তাৎক্ষণিক সম্পৃক্ততা, হাইপার-পার্সোনালাইজেশন এবং ডাটা-নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এআই, অটোমেশন এবং অ্যানালিটিক্সের সংযোজন মূলত ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে তাদের দর্শকদের সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়াকে আমূল পরিবর্তন করেছে। ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড কেবলমাত্র উৎকর্ষতার উদযাপন নয়; এটি আমাদের শিল্পের ক্রমাগত বিবর্তনের একটি প্রমাণ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে উদ্ভাবন, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং কৌশলগত সৃজনশীলতাই ডিজিটাল জগতে সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি। আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন আমাদের শুধু আমাদের অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং নিজেদের আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করতে হবে এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।”

৮ম ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ডের পূর্বে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগে “ডিজিটাল রেনেসাঁ: ইনোভেটিং ফর টুমরো’স কনজিউমার” প্রতিপাদ্যকে মুখ্য করে ১১ম ডিজিটাল সামিট অনুষ্ঠিত হয়। ২টি কিনোট সেশন, ৪টি প্যানেল ডিসকাশন এবং ২টি ইনসাইট সেশনের সমন্বয়ে সাজানো এই বছরের সামিটে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞরা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল পরিবর্তন এখন আর শুধু একটা বিকল্প নয়, বরং অত্যবশকীয়। তিনি বলেন, “আমরা এমন এক সময়ে আছি, যেখানে ডিজিটাল রূপান্তর শুধু ভবিষ্যতের কথা নয়—এটি এখনই আমাদের চারপাশে ঘটছে, এবং ব্যবসা ও ব্র্যান্ডের সাথে মানুষের যোগাযোগের ধরন বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের উদ্ভাবনী হতে হবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং ভোক্তাদের চাহিদা ভালোভাবে বুঝতে হবে। এই সম্মেলনের লক্ষ্যই হলো বিশেষজ্ঞ বক্তা এবং সমবেত অতিথিদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে তুলে ধরা আমাদের নতুনভাবে চিন্তা করতে, ভোক্তাদের সাথে আরও ভালোভাবে সংযোগ তৈরি করতে এবং ডিজিটাল জগতে সফলভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”
১১তম ডিজিটাল সামিটে দুইটি কিনোট সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বক্তা ছিলেন জাভেদ আখতার, চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড; প্রেসিডেন্ট, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই); এবং মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, লিডারশিপ কনসালটেন্ট, টেলিকম এক্সপার্ট, প্রেসিডেন্ট, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি); ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং পার্টনার, বিল্ডকন কনসালট্যান্সিস লিমিটেড।
প্যানেল আলোচনা গুলোতে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। হাইপার পার্সোনালাইজেশন ও অভিজ্ঞতানির্ভর অর্থনীতির মতো প্রাসঙ্গিক বিষয়ের পাশাপাশি ডেটা ভিত্তিক ক্রিয়েটিভিটির চর্চায় উদ্ভাবনের গুরুত্ব, এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈপ্লবিক ভূমিকার মতো বিষয়গুলো আলোচিত হয়।
প্যানেল এবং ইনসাইট সেশনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আহসানুর রহমান, এসভিপি – হেড অফ মিডিয়া অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং, বিকাশ লিমিটেড; উরফি আহমেদ, জেনারেল ম্যানেজার, ভিএমএল বাংলাদেশ; দীপেশ নাগ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেড; সৈয়দা উম্মে সালমা (ঝুমুর), চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিইও, ব্র্যান্ডগিয়ার; মুহাম্মদ নাফিজুল বারী, হেড অফ ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ইনোভেশন, অ্যাডকম লিমিটেড; মোঃ এহসানুল হক, রিজিওনাল পার্টনার ডিরেক্টর, এপিএসি, মিডিয়াম বাংলাদেশ লিমিটেড; আরিফুর রহমান, ডিরেক্টর – ডিজিটাল মিডিয়া, স্টারকম বাংলাদেশ; কাইমুন আমিন, ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, অ্যাডপ্লে টেকনোলজিস লিমিটেড; জোশুয়া অধিকারী, রিজিওনাল ডিরেক্টর – সাউথ এশিয়া, এসকিমি; তানজীন ফেরদৌস, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, ডেলহিভারি লিমিটেড; দ্রাবির আলম, চিফ অপারেটিং অফিসার ও ডিরেক্টর, এক্স – ইন্টিগ্রেটেড মার্কেটিং এজেন্সি; মুনাফ মোজিব চৌধুরী, হেড অফ ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন, অ্যাক্সেন্টেক পিএলসি; মোঃ সাইমুম হোসেন, কো-ফাউন্ডার অ্যান্ড হেড অফ বিজনেস, গিকি সোশ্যাল; সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তাসফিয়া তাসবিন, কো-ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, মার্কোপোলো.এআই; আয়েশা ফারজানা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেড; শারমিন রহমান, হেড অফ কর্পোরেট ব্র্যান্ড, গ্রামীণফোন লিমিটেড; হাসিব হাসান চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, অ্যাডকম লিমিটেড; জয়নুল হক, চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার, ডটবার্থ লিমিটেড; রাকিব চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, এক্স – ইন্টিগ্রেটেড মার্কেটিং এজেন্সি; মাহাদী হাসান সাগর, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, গিকি সোশ্যাল এবং ইশতিয়াক শাহরিয়ার, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অফ ডিপার্টমেন্ট – ডিজিটাল অ্যাসেটস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, কমিউনিকেশনস ডিভিশন, বিকাশ লিমিটেড।
১১ তম ডিজিটাল সামিট ও ৮ম ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগ। আয়োজনটির পরিবেশনায় ছিলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ। এছাড়াও, আয়োজনটির অফিশিয়াল ক্যারিয়ার পার্টনার – টারকিশ এয়ারওয়েজ; হসপিটালিটি পার্টনার – ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা; নলেজ পার্টনার – মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ; টেকনোলজি পার্টনার – আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড; পিআর পার্টনার – ব্যাকপেজ পিআর।