টেকসিঁড়ি ফিচারঃ ২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি ও চাকরির বাজারে বড় ধরনের বিবর্তন দেখা দেবে। এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নির্দিষ্ট কিছু কারিগরি দক্ষতা অর্জন করা এখন সময়ের দাবি। আজকের আর্টিকেলে আমি এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় টুলস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে। লিখেছেন: প্রকৌশলী সামিউল হক সুমন।
১. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও অটোমেশন
২০২৪-২৫ সালে আমরা AI ব্যবহার করতে শিখেছি, কিন্তু ২০২৬ সাল হবে AI-কে বিভিন্ন ব্যবসায়িক মডেলে প্রয়োগ করার বছর। বাংলাদেশের ই-কমার্স, ব্যাংক এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে AI-এর ব্যবহার বহুগুণ বাড়বে।
মূল দক্ষতা: কেবল চ্যাটবট চালানো নয়, বরং এজেন্টিক এআই (Agentic AI) এবং মেশিন লার্নিং মডেল অপ্টিমাইজেশন।
কেন প্রয়োজন:দেশের তৈরি পোশাক (RMG) শিল্পে অটোমেশন এবং ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে AI-তে দক্ষ হওয়া বাধ্যতামূলক।
প্রয়োজনীয় টুল: Python, LangChain, এবং OpenAI API বা Gemini-এর মতো প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার।
২. সাইবার সিকিউরিটি ও ডাটা সুরক্ষা
বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনের (বিকাশ, নগদ, বা স্মার্ট ব্যাংকিং) হার বৃদ্ধির সাথে সাথে সাইবার হামলার ঝুঁকিও বাড়ছে। ২০২৬ সালে দেশের প্রতিটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সংস্থায় নিজস্ব সাইবার সিকিউরিটি টিম থাকা আবশ্যিক হয়ে পড়বে।
মূল দক্ষতা:এথিক্যাল হ্যাকিং, ডিজিটাল ফরেনসিক এবং জিরো ট্রাস্ট আর্কিটেকচার (Zero Trust Architecture)।
কেন প্রয়োজন: জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা প্রদানে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরে হাজার হাজার দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরি হবে।
৩. ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডেভঅপস (DevOps)
বাংলাদেশের অধিকাংশ কোম্পানি এখন নিজস্ব ফিজিক্যাল সার্ভারের বদলে ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা গ্লোবাল ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি এখন সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন স্কিল।
মূল দক্ষতা: প্ল্যাটফর্ম ইঞ্জিনিয়ারিং, কুবারনেটিস (Kubernetes) এবং এডব্লিউএস (AWS) বা অ্যাজুরি (Azure) ম্যানেজমেন্ট।
কেন প্রয়োজন: সফটওয়্যার দ্রুত ডেভেলপ করা এবং সেটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর জন্য ডেভঅপস ইঞ্জিনিয়ারদের কোনো বিকল্প থাকবে না।
৪. ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যানালিটিক্স
বাংলাদেশে ২০২৬ সাল নাগাদ ডেটা হবে নতুন “জ্বালানি”। কোম্পানিগুলো এখন শুধু ডেটা জমা করছে না, বরং সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে।
মূল দক্ষতা:বিগ ডেটা হ্যান্ডলিং, SQL, এবং ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন (Tableau বা Power BI)।
কেন প্রয়োজন:টেলিকম সেক্টর, ই-কমার্স এবং ফিনটেক কোম্পানিগুলো গ্রাহকের আচরণ বুঝতে প্রচুর ডেটা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেবে।
৫. ইউআই/ইউএক্স (UI/UX) ডিজাইন ও ডিজিটাল সলিউশন
স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিকরা এখন অনেক বেশি সচেতন। ফলে যেকোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মানসম্মত ডিজাইন এবং সহজ ব্যবহারযোগ্যতা (User Experience) নিশ্চিত করা কোম্পানিগুলোর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মূল দক্ষতা: ইউজার রিসার্চ, প্রোটোটাইপিং এবং ফিগমা (Figma)-তে দক্ষতা।
কেন প্রয়োজন: লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনালি “মেড ইন বাংলাদেশ” অ্যাপগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে উন্নত ডিজাইনের গুরুত্ব অপরিসীম।


