31 C
Dhaka
১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ‎ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
টেকসিঁড়ি

সোশ্যাল মিডিয়ায় বৈশ্বিক রাজনৈতিক বিপ্লবের ইতিহাস (পর্ব – ১)

টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের মধ্যে যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ এবং একে অপরের সাথে যুক্ত হওয়ার পদ্ধতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি মহাবিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিপ্লবগুলিকে সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বর্তমান রাজনৈতিক বিপ্লবে সোশ্যাল মিডিয়ার বহুমুখী ভূমিকা নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

আরব বসন্ত, নাইজেরিয়ায় সারস সমাপ্তি আন্দোলন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতো উল্লেখযোগ্য আন্দোলনগুলি দ্বারা দেখা গেছে আধুনিক রাজনৈতিক বিপ্লবের সময় সক্রিয়তাকে সংগঠিত ও প্রসারিত করতে সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই আন্দোলনগুলি প্রতিবাদ করতে কিংবা সচেতনতা বাড়াতে এবং জনসমর্থন জোগাড় করতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির শক্তিকে ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে।

তিউনিসিয়ায় নিজের গায়ে আগুন লাগিয়েছিলেন রাস্তার এক দোকানি মোহাম্মদ বুয়াজিজি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ওই ব্যক্তির সেই পদক্ষেপ থেকে জন্ম নিয়েছিল আরব বসন্ত আন্দোলন। সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ২০১০ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া আরব বসন্তকে প্রায়শই রাজনৈতিক বিপ্লবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবের প্রধান উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। Facebook, Twitter, এবং YouTube-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি সংঘবদ্ধকরণের জন্য অনুঘটক হিসাবে কাজ করে, যা আন্দোলনে সক্রিয় থাকা কর্মীদের তথ্য শেয়ার করতে কিংবা প্রতিবাদের সমন্বয় করতে বিরাট ভুমিকা পালন করেছে।

নাইজেরিয়ায় পুলিশের এক বিশেষ বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল বেশ কয়েকবছর ধরেই। ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরীহ লোকজনের ওপর বর্বর ও নিষ্ঠুর নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বহু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ২০২০ আন্দোলনের গতিপথ বদলে দেয় সোশ্যাল মিডিয়া। এই সার্স বাহিনীর হাতে নির্যাতনের প্রতিবাদে নতুন করে ফুঁসে উঠেছে নাইজেরিয়া, যাতে উত্তাল হয়ে পড়েছে সারা দেশ। প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভ এখন নাইজেরিয়ার ছোট বড় বিভিন্ন শহর ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশেও। প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক, বার্লিন থেকে টরন্টো থেকে। #EndSARS হ্যাশট্যাগটি নাইজেরিয়ানদের একত্রিত করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার সানফোর্ডে ট্রেভন মার্টিন নামে একজন নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে হত্যার অভিযোগ থেকে জর্জ জিম্মারম্যানকে খালাস পাওয়ার পর ২০১৩ সালে, সোশ্যাল মিডিয়ায় #ব্ল্যাকলাইভসম্যাটার হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। দুজন আফ্রিকান-আমেরিকান ২০১৪ এর মৃত্যুর পরে এই আন্দোলনটি জাতীয়ভাবে রাস্তার বিক্ষোভের জন্য স্বীকৃতি লাভ করেছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (বিএলএম) আন্দোলন পদ্ধতিগত বর্ণবাদ এবং পুলিশি সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়াকে ভিশনভাবে কাজে লাগিয়েছে। #BlackLivesMatter এবং #SayTheirNames-এর মতো হ্যাশট্যাগগুলি টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পরেছিল দাবানলের মতো।

এসব আন্দোলনগুলিকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো কিংবা দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে দিতে অংশগ্রহণকারীদেরকে বিভিন্ন পরিসরে যুক্ত করতে বিশাল ভুমিকা পালন করে আসছে। এটি প্রান্তিক পর্যায়ে নির্যাতিত মানুষের আর্তনাদ  লড়াইকারীদের মধ্যে সংহতির অনুভূতি তৈরি করে। তথ্য দ্রুত প্রচার করার ক্ষমতা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান, নেটওয়ার্ক গঠনের সুবিধা এবং রিয়েল-টাইম ডকুমেন্টেশন সক্ষম করার ক্ষমতা মানুষের রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত হওয়ার পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, সমাজের সকল স্তরের ব্যক্তিরা একত্রিত হতে পারে, সম্মিলিত কর্ম সংগঠিত করতে পারে এবং তাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ন্যায়বিচার, সমতা এবং সামাজিক রূপান্তরের জন্য লোকেদের সংগঠিত করার, দূরত্বের সেতুবন্ধন এবং সংযোগ করার জন্য এটি একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। (চলবে)

লিখেছেন সামিউল হক সুমন, প্রকাশক ও নির্বাহী সম্পাদক, টেকসিঁড়ি ডট কম।

Related posts

স্মার্ট ব্যবহারকারীর জন্য ইনফিনিক্স ইনবুক এক্স ২

Tahmina

আপনার ফোন আপনার সম্পর্কে যা যা জানে ( পর্ব ২)

Tahmina

স্মার্টফোন বাতিলের ১২টি লক্ষণ

Tahmina

Leave a Comment