টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রথম নারী মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ড. মাধবী ইসলাম। তিনি দেশের প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বিজ্ঞানী । এমনকি তিনি দেশের সবচেয়ে বড় এবং দ্রুততম মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপনেও ভূমিকা রেখেছেন।
ডক্টর মাধবী ১৯৮২ সালে একজন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসাবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্সে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার, চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার পদে উন্নীত হয়েছিলেন। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠানটির উন্নতিতে বিরাট অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং দ্রুততম মেইনফ্রেম কম্পিউটার (সিস্টেম-৪৩৪১) স্থাপনসহ এর অপারেশন এবং ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তিনি ।
তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় বাংলাদেশ অঞ্চলের INIS অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে তাকে পরমাণু শক্তি কমিশনের মহাপরিচালক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। সে বছরই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ বছরের কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৮ সাল থেকে ড. মাধবী আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (AIUB) গণিতের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।
ড. মাধবী ইসলাম বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে কাজ করার সময় থেকেই শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সে সময় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেখানে স্নাতকোত্তর গবেষণার কাজে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
এছাড়াও তিনি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষক এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলনে যোগদানের জন্য ইতালি, অস্ট্রিয়া, জাপান, মস্কো, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশ সফর করেছেন।
ড. মাধবী ইসলাম ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্থান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া । তিনি ভারতের প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ এর দশকে তিনি পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ নিয়ে রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যান। সেখানে বাংলাদেশি অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলামের সাথে ড. মাধবী ইসলামের পরিচয় হয়। ড. মো. তাজুল ইসলাম পিএইচডি করার জন্য ১৯৭২ সাল থেকে মস্কোতে অবস্থান করছিলেন। অধ্যাপক তাজুলের সাথে বিয়ের পর ড. মাধবী ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।
পারিবারিক জীবনে ড. মাধবী ইসলাম এক পুত্র (কিংশুক) এবং দুই কন্যা (মৌতুসী এবং উপলা) এর একজন সফল মা। স্বামী ড. মোঃ তাজুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ইউজিসি, বাংলাদেশের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার শিক্ষাজীবনের অংশ হিসেবে, তিনি পিয়ার আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। বিএইসিতে তার চাকরির মেয়াদে, তিনি বিএইসির চাহিদা অনুসারে বৈজ্ঞানিক এবং প্রশাসনিক উভয় ধরণের কিছু সফ্টওয়্যার তৈরি করেছিলেন।