ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট (IXP) হলো এমন নেটওয়ার্ক যেখানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP), কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (CDN) এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক অপারেটররা নিজেদের মধ্যে ট্রাফিক বিনিময় করে,যা ইন্টারনেটের কার্যকারিতা ও গতি উন্নত করে। এটি ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে এবং বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল যোগাযোগকে সহজতর করে। ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট আজ বিস্তারিত লিখেছেন মোঃ আলমগীর কবির এবং সম্পাদনা করেছেন সামিউল হক সুমন।
IXP কিভাবে কাজ করে?
ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট মূলত একটি ফিজিক্যাল লোকেশন যেখানে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অপারেটররা তাদের রাউটার এবং সুইচ সংযুক্ত করে। যখন দুটি নেটওয়ার্ক একই IXP-এ সংযুক্ত থাকে, তখন তারা সরাসরি একে অপরের সাথে ডেটা বিনিময় করতে পারে। এটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ডেটা রাউটিং করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যা ইন্টারনেটের গতি বাড়ায় এবং খরচ কমায়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক বাংলাদেশের একটি ISP এবং ভারতের একটি ISP উভয়ই ঢাকার একটি IXP-এ সংযুক্ত। যখন বাংলাদেশের একজন ব্যবহারকারী ভারতের একটি ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে চান, তখন ডেটা সরাসরি IXP-এর মাধ্যমে বিনিময় হয়। এর ফলে ডেটা ট্রানজিটের সময় এবং খরচ উভয়ই কমে যায়।

বিশ্বে IX সার্ভিসের জন্য লাইসেন্স ও নীতিমালা:
বিশ্বব্যাপী IX সার্ভিস পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট লাইসেন্সিং নীতিমালা প্রতিটি দেশের নিজস্ব টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
বাংলাদেশ: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) IX সার্ভিস পরিচালনার জন্য লাইসেন্স প্রদান করে।
ভারত: ভারতে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (TRAI) IX পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং লাইসেন্স প্রদান করে।
প্রতিটি দেশের নীতিমালা তাদের নিজস্ব টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো, বাজার পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা বিবেচনায় ভিন্ন হতে পারে।
বিশ্বে কিছু IX পরিচালিত দেশের সংখ্যা ও তালিকা:
ইন্টারনেট সোসাইটি (ISOC) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট (IXP) রয়েছে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য দেশের তালিকা দেওয়া হলো:
যুক্তরাষ্ট্র | কানাডা | যুক্তরাজ্য | জার্মানি | জাপান | ভারত | চীন | অস্ট্রেলিয়া | সিঙ্গাপুর | দক্ষিণ আফ্রিকা | নাইজেরিয়া
ব্রাজিল । আর্জেন্টিনা | মেক্সিকো | বাংলাদেশ | নেপাল |
IXP-তে সংযোগের জন্য ASN ও IP থাকলেই সাধারণত, যে কোনো নেটওয়ার্ক অপারেটর বা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্টে (IXP) সংযোগ স্থাপনের জন্য শর্ত পূরণ করতে পারে।
অটোনোমাস সিস্টেম নম্বর (ASN): প্রতিটি নেটওয়ার্কের একটি স্বতন্ত্র ASN থাকতে হয়, যা ইন্টারনেট রাউটিং প্রটোকলগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
আইপি এড্রেস: প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পাবলিক আইপি ঠিকানা ব্লক থাকতে হয়, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সমিশনে ব্যবহৃত হয়।
তবে, প্রতিটি IXP-এর নিজস্ব নীতিমালা ও শর্তাবলি থাকতে পারে, যা সংযোগের জন্য অতিরিক্ত প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করতে পারে।
বাংলাদেশে IXP এর অবস্থানঃ
বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে, যা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি ঢাকায় অবস্থিত এবং দেশের বিভিন্ন ISP এবং নেটওয়ার্ক অপারেটররা এতে সংযুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের IXP স্থানীয় ইন্টারনেট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করেছে এবং আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের উপর চাপ কমিয়েছে।
সবশেষঃ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট (IXP) আধুনিক ইন্টারনেট অবকাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, খরচ কমানো, এবং নেটওয়ার্কের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে IXP-এর সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। IXP-এর মাধ্যমে আমরা আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী, এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে পারি, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।