টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : স্থানীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার প্রসার এবং সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩১ পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবী করেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা । বর্তমানে চলমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৪-এ শেষ হয়ে যাবে।
কাওরানবাজার বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনিুষ্ঠিত হয়।
এতে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক এবং ই-ক্যাব-এর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন উপস্থিত থেকে নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন।
গত ১০মার্চ, বেসিস সহ পাঁচটি তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারকে কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। শীর্ষ আইটি বাণিজ্য সংগঠনগুলো অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হলে খাতের প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ এবং রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে যদি করের আওতায় আনা হয়, সেটা মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশও হবে না। তথ্যপ্রযুক্তি খাত সবে মাত্র দাঁড়াতে শুরু করেছে, সামনে আমাদের দৌড়ানোর সময়। এসময়ে শুধুমাত্র সরকারের এই অল্প আয়ের জন্য একটা সম্ভাবনাময় খাতকে হুমকির মুখে ফেলা ঠিক হবে না। যেহেতু সরকার দেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চায়, তাই এই খাতে কর অব্যাহতি বজায় রাখা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কমপক্ষে ২০৩১ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উপর কর অব্যাহতির দাবি করছি এবং এ ব্যাপারে বেসিস সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত আকারেও চিঠি দিয়েছে। আশা করছি সরকার স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কর অব্যাহতির দাবি অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে।
বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন,“স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে বিনিয়োগ করে, সেক্ষেত্রে কর অব্যাহতির ফলে কেবল মাত্র এই ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই আমি মনে করি এই কর অব্যাহতির সুবিধা বলবৎ রাখার কোনো বিকল্প নেই।”
বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, “বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা এই খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের ফলেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে সরকার মনে করছে এই শিল্প খাত থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। কিন্তু এই শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কর্মরত পেশাজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান এবং মূল্য সংযোজন কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারা এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।
আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি আমি আইএসপিএবি ইন্ডাস্ট্রিকে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা (ITES) খাতের অন্তরভূক্ত করার জন্য আবারও দাবী জানাচ্ছি। তাছাড়া বর্তমান প্রতিযোগীতা মূলক ইন্টারনেট সেবায় আমদানী নির্ভর আইএসপি সেক্টরের যন্ত্রপাতি ও ডলারের উর্ধগতির বাস্তবতায় সকল আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যয় বহন করে রেভিনিউ এর উপর ১০% লাভ করতে পারেনা। ফলে ইন্টারনেট সার্ভিসের বিলের উপর অতিরিক্ত ১০% (AIT) কর আরোপে সকল আইএসপি প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। আগামী ২০২৪- ২০২৫ অর্থবছরে ইন্টারনেট সার্ভিসের উপর ১০% (AIT) রহিত করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।”
ই-ক্যাব-এর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, “প্রযুক্তি এবং আরো আনুষঙ্গিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে প্রযুক্তি খাতকে আমাদের আরো কিছুদিন বিশেষ যত্ন ও সুবিধার প্রয়োজন। কর অব্যাহতি হলো তার একটি। এর মাধ্যমে এখাত টেকসই ও সক্ষম হয়ে উঠবে।