টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : রুয়েট যাচ্ছে ৮ম হুয়াওয়ে আইসিটি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে । রিজিওনাল ফাইনাল রাউন্ডের নেটওয়ার্ক ট্র্যাকে ৩য় হয়ে পরের রাউন্ডের জন্য কোয়ালিফাই করলো রুয়েট। মে মাসে গ্লোবাল ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে চীনে।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়, আসিয়ান হেডকোয়ার্টারসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রিজিওনাল ফাইনাল রাউন্ডের ফলাফল ঘোষণা করা হয় ১৮ এপ্রিল, ২০২৪। গত ৮ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ফাইনাল এবং গ্লোবাল ফাইনাল রাউন্ডে কোয়ালিফাই করতে পেরেছে।
বাংলাদেশে দলের সদস্যরা হলেন : শুভম আগরওয়ালা, মো. মাজহারুল ইসলাম এবং রাকেশ কর এবং তাদের ইন্সট্রাকটর আজমাইন ইয়াকীন সৃজন ।
রুয়েটের বিজয়ী দলের সদস্য শুভাম আগারওয়ালা বলেন, “এই প্রতিযোগিতা আমাদের আইসিটি এবং নেটওয়ার্ক সেক্টর সম্পর্কে নতুন কিছু শেখার অনেক সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মেও আসতে পেরেছি। ষ্টেজে সবার সামনে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দাঁড়ান আমাদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা ছিলো। এমন অভাবনীয় সুযোগ তৈরি করার জন্য আমরা হুয়াওয়ের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমরা গ্লোবাল রাউন্ডে আরও ভালো কিছু অর্জনের চেষ্টা আমাদের থাকবে।“
হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার বোর্ড সদস্য লিজংশেং (জেসন) বলেন, ”হুয়াওয়ে বিশ্বাস করে, তরুণরা যেকোনো দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বাংলাদেশে যে বিশাল সংখ্যক তরুণ রয়েছে তাঁদের সম্ভাবনা অসীম। আর সেই বিশ্বাস নিয়েই হুয়াওয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আইসিটির জ্ঞান বৃদ্ধি করতে নানা ধরনের উদ্যোগের নিয়ে আসছে। বিজয়ী দলকে আমি অভিনন্দন জানাই। আমরা বাংলাদেশে প্রতিভা বিকাশের জন্য একটি দায়িত্বশীল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবো।”
রুয়েটের সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আজমাইন ইয়াক্কীন সৃজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জাকার্তার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার ছাত্ররা এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শুধু বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বই করছে না, তারা সকলের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে নিয়েছে। এতে আমি খুবই গর্বিত বোধ করছি।
হুয়াওয়ে আইসিটি প্রতিযোগিতা হলো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় দক্ষ শিক্ষার্থীদের নানাবিধ কঠোর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করে থাকে।
মূলত তিনটি বিভাগে এই প্রতিযোগিতা হয়, তার মধ্যে, practice competition বিভাগে ৩টি বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতা হয়। যা হল নেটওয়ার্ক ট্র্যাক (ডেটাকম, সিকিউরিটি এবং ওয়্যারলেস), ক্লাউড ট্র্যাক (ক্লাউড, বিগ ডেটা এবং এআই), এবং কম্পিউটিং ট্র্যাক (ওপেন অয়লার এবং ওপেন গাউস)।
গত বছর শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজারেরও বেশি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় নেটওয়ার্ক ট্র্যাক, ক্লাউড ট্র্যাক, কম্পিউটিং ট্র্যাক ও ইনোভেশন ট্র্যাক এই চারটি গ্রুপে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল। প্রতিটি ট্র্যাক থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে তাদের অধ্যয়ন ও পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পর্বে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
পরবর্তীতে তাঁদের মধ্য থেকে শীর্ষ বারোজন চারটি দলে ভাগ হয়ে এপিএসি পর্বে যোগ দেয়। রুয়েটের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তৈরি একটি দল যোগ দেয় নেটওয়ার্ক ট্র্যাকে, আরেকটি দল যোগ দেয় কম্পিউটিং ট্র্যাকে। এই ট্র্যাকে প্রতিযোগিতা করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আরও একটি দল। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি দল যোগ দেয় ক্লাউড ট্র্যাকে।
এই চার দলের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্র্যাক গ্রুপে অংশগ্রহণকারী রুয়েটের তিনজনের দলটি এপিএসি পর্বের ১৪টি দেশের ৬৪০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীর্ষ তিনে জায়গা করে নিয়েছে।
ফলশ্রুতিতে, তারা ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সকল প্রতিযোগি দলদের মধ্যে তাঁরা অন্যতম সর্বোচ্চ স্কোরকারী।
গ্লোবাল রাউন্ডে প্রায় ৪০টি দেশের ৫০০-এরও বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে তৈরি ১৭০টিরও বেশি দল অংশগ্রহণ করবে। শুরুর পর এটি হুয়াওয়ে আইসিটি প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় অফলাইন গ্লোবাল ফাইনালে পরিণত হতে যাচ্ছে। “কানেকশন, গ্লোরি, অ্যান্ড ফিউচার” থিমের এই ইভেন্টে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে।
হুয়াওয়ের তথ্যমতে, বিগত বছরের প্রতিযোগিতায় ৮৩ টি দেশ ও অঞ্চলের ২,৬০০ এরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ১,৬০,০০০ এর মত শিক্ষার্থী ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল।
বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে টানা চার বছর ধরে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে ১৫,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।