টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব থেকে আগামী দিনে ইউনিকর্ন স্টার্টআপ (১০ হাজার কোটি টাকার কোম্পানি) বের হয়ে আসবে বলে বলেছেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) জি এস এম জাফরউল্লাহ, এনডিসি।
মঙ্গলবার বিএইচটিপিএ এর সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এস এম জাফরউল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধার চর্চা হচ্ছে। সেখানে গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্টার্টআপ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব গড়ে তুলছি। এসব হাবে শিক্ষার্থীদের আইডিয়া বিকশিত করতে যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক উদ্ভাবন ও স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব গড়ে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ)। এ জন্য ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বিএইচটিপিএর ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন (ডিড) প্রকল্প।
ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান এবং নির্বাচিত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার সংযোগ স্থাপনে বড় ভূমিকা রাখবে ইনোভেশন হাব। ইনোভেশন হাবের মাধ্যমে যেসব সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে এখান থেকেই ফেসবুক-গুগলের মতো বড় বড় প্রডাক্ট/প্রতিষ্ঠান বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি। একজন তরুণ শিক্ষার্থী/উদ্যোক্তা তাঁর পুরো যাত্রাপথটি কিভাবে পাড়ি দেবে সে ব্যাপারে আমরা কার্যক্রম করছি। স্টার্টআপদের আইডিয়েশন থেকে কমার্শিয়ালাইজেশন পর্যন্ত সহায়তা করেছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বিশ্বব্যাংক।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব স্থাপন করা হচ্ছে, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে ইনোভেশন হাব স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাব তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচিত অবশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে হাব তৈরি করা হবে।
ডিড প্রকল্পের ইনোভেশন ও কমার্শিয়াল স্পেশালিস্ট এ এন এম সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন হাবে মেধাবী শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে এবং স্টার্টআপ স্কেলআপ কর্মসূচির মাধ্যমে বিকশিত হয়ে একেকজন স্টার্টআপ যাতে ইউনিকর্ন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা দেশে একটি ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়তে চাই। যেসব তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করবেন তাঁদের জন্য স্কেলআপ কার্যক্রম রয়েছে, যেখানে প্রশিক্ষণ, মেন্টরিং, সিড ফান্ডসহ নানা সুবিধা দেওয়া হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টার্টআপদের জন্য কো-ওয়ার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহারের জন্য হাবে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাবে আছে আইডিয়া বিকাশের নানা সুবিধা। এর মধ্যে আছে কো-ওয়ার্কিং ও লার্নিং স্পেস, পিচিং সুবিধার জন্য পৃথক থিয়েটার, প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস, মিটিং রুম, ফেব্রিকেশন ল্যাব সুবিধা, প্রটোটাইপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স সফটওয়্যার, লাইব্রেরি।
এ ছাড়া আছে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন : রোবটিকস ভিআর, ড্রোন তৈরি অনুশীলনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, থ্রিডি প্রিন্টার, কাটিং ও এনগ্রেভিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ হাব তৈরি করবে এবং প্রকল্প চলাকালীন এই হাবের সুষ্ঠু পরিচালনা, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের কাজ করবে। প্রকল্প শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করবে সেই লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়।
অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ডিড প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক, বিএইচটিপিএর পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।