টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : ২১ আগস্ট সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে মাত্র ৪ লাইনের একটি পোস্ট দেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের শায়খ আহমদউল্লাহ । কমেন্টে দেন লিংক। তারপর বাকিটা ইতিহাস। এখন শত কোটি টাকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখছেন প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি লিখেন, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বরাবরের মতো বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছে As sunnah Foundation। ফেনীতে আগামীকাল থেকে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরেও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ।”
এই পোস্টের পর ফেইসবুক জুড়ে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে অর্থ দানের স্ক্রিনশট , ছবি, লিংক পোস্ট করে ব্যবহারকারীরা তাদের আস্থার জায়গা হিসেবে অন্যদের উৎসাহিত করেন। ঘটতে থাকে একের পর এক গতিময় সব কারবার। হাজার টাকা, লাখ টাকা থেকে শুরু করে যে যার সাধ্য মতো দান করেন। কার্যক্রম দেখতে আসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ। সকলের উচ্ছ্বাসে এখন শত কোটি টাকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখছেন প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থব্যয় না করেও দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন শায়খ আহমদউল্লাহ। তিনি জানান, আপনি চাইলে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে পারেন অর্থব্যয় না করেই। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। যেহেতু এটি পরিশ্রমসাধ্য কাজ, এজন্য আমরা কায়িক শ্রমে সক্ষম এ ধরনের মানুষকেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বিশেষভাবে তরুণদের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্যাকেজিংয়ের স্থান মাদরাসাতুস-সুন্নাহ। সবাই সেখানে উপস্থিত হয়ে যেতে পারেন। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আফতাবনগর কার্যালয় থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে।
দানের প্রতিযোগিতার পর প্যাকেজিং করতে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার জন্যও মানুষ একইভাবে প্রতিযোগিতা করে। তাদের কর্মযজ্ঞে কায়িক শ্রম দিতে ছুটে যায় হাজারো মানুষ। এর মধ্যে ছিলেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র, কর্মজীবি , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পা হারানো প্রতিবন্ধী, সনাতন ধর্মাবলম্বী, এমনকি শিশুরাও।
শায়খ তাঁর ফেইসবুক পেইজে লিখেন , প্রায় দশ কেজির প্যাকেজে ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের পাশাপাশি ৫০ হাজার পরিবারের জন্য চাল-ডাল-তেল ইত্যাদি বিতরণের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। গতকাল সেটা বাড়িয়ে আমরা ৭০ হাজারে উন্নীত করেছি। পানি কমে গেলে ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণের ঘোষণা দিয়েছিলাম আমরা। গতকাল সেটা বাড়িয়ে ৭০ হাজারে উন্নীত করেছি। এছাড়া বন্যায় গৃহহারা ৫ হাজার পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প যথারীতি থাকছেই ইনশাআল্লাহ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং কৃষককে সুদি কিংবা সুদমুক্ত ঋণের পরিবর্তে সম্পূর্ণ নগদ অর্থ সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। সেই সাথে বন্যায় মৃত্যু বরণকারী অসহায় পরিবারের উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও তারা হাতে নেবেন বলেন জানান।
১১ টি জেলায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত। ২৩ জনের মৃত্যুর খবরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না করা ইত্যাদি জনমনে আরও উদবিঘ্নতা তৈরি করে। বন্যায় দুর্গম অঞ্চলগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ও জরুরি লাইট চার্জের জন্য প্রতিষ্ঠানটি জেনারেটরের ব্যবস্থা করে।
মানুষের পাশাপাশি তারা ভেবেছেন গৃহপালিত পশুর কথাও। গোখাদ্য হিসেবে দুর্গত এলাকার জন্য দেয়া হচ্ছে ভূসি। এগুলো বন্যদুর্গত বিভিন্ন স্পটে বিতরণ করা হবে।
বন্যার্তদের সাহায্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছেন আস সুন্নাহ’র নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলো। কখনো সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছেন। চলছে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন স্পটে বিতরণ ।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক শিক্ষা, দাওয়াহ ও পূর্ণ মানবকল্যাণে নিবেদিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুককে কাজে লাগিয়ে দেশের এই কঠিন মুহূর্তে তাঁরা প্রশংসনীয় এই উদ্যোগ পরিচালিত করে যাচ্ছে।