টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : সন্তান প্রসবের পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, এই সময় সিরিয়াস পর্যায়ে দেড় থেকে দুই লিটার রক্তপাত হয়ে থাকে। রক্তের অভাবে সারা বিশ্বের মায়েদের মত বাংলাদেশেও মায়েদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ডাক্তার সায়েবা আক্তার এই সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান দিয়েছেন। বর্তমানে এই পদ্ধতি সারাবিশ্বে ‘Condom Catheter Tamponade’ কিংবা ‘Sayeba’s Method’ নামে পরিচিত।
ডাক্তার সায়েবার এই উদ্ভাবন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং কানাডার মতো দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই উদ্ভাবনের জন্য তিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে পুরষ্কৃত হয়েছেন।
দেহের যে অংশে রক্তক্ষরণ হয়, সেখানে চাপ প্রয়োগ করলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। এই পদ্ধতিটিও এই মূলনীতি মেনেই কাজ করে। এই পদ্ধতিতে জরায়ুতে চাপ প্রয়োগ করার ফলে, রক্তক্ষরণ কিছু সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।
Condom Catheter Tamponade পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন হয় একটি ক্যাথেটার, একটি কনডম, কিছুটা মেডিকাল স্ট্রিং, স্যালাইন সেট এবং স্যালাইন ফ্লুইড। কনডমটিকে ক্যাথেটারের একপ্রান্তে যুক্ত করে আরেকপ্রান্তে স্যালাইন সলিউশন স্যালাইন সেটের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়। এরপর কনডমটি জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়, এটি স্যালাইন সলিউশনে পূর্ণ থাকায় জরায়ুতে চাপ বজায় রাখে, ফলে ১০ মিনিটের মধ্যেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশে ৪০% মাতৃত্বকালীন মৃত্যু রক্তক্ষরণের কারণে হলেও, এই আবিষ্কারের পর তা কমে এসেছে ব্যাপকহারে। ২০০০ সালে, ডাক্তার সায়েবা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনোকলজি এবং অবস্টেট্রিকস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারে ছিলেন। তিনি খেয়াল করেন, অনেক নারী সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে, উপযুক্ত রক্ত না পাওয়ায় নারীরা মারা যাচ্ছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থাকে বলা হয় ‘Postpartum Hemorrhage’। মারাত্মক পর্যায়ের Postpartum Hemorrhage এ রোগীর দেহ থেকে দুই লিটার পর্যন্ত রক্ত ক্ষরিত হয়। এর ফলে রোগী মৃত্যুবরণ করে। ডাক্তার সায়েবা আক্তার তখন এই সমস্যার একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে বের করেন।