টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : কারাবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা রাজধানীতে বিক্ষোভের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় রবিবার পাকিস্তান “নিরাপত্তা উদ্বেগ সহ এলাকায়” মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছে।
সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘোষণাটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করেছে, যা পাকিস্তানে নিষিদ্ধ। তারা এলাকাগুলি নির্দিষ্ট করেনি, বা কতদিন স্থগিতাদেশ থাকবে তাও তারা জানায়নি।
রাজধানীর প্রত্যেক প্রবেশপথে বড় বড় কনটেইনার ফেলে সামনে অবস্থান করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী যে কোনো মূল্যে রাজধানী ইসলামাবাদকে সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদের কাছে ও রাওয়ালপিন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পিটিআই নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। খবর দ্য ডন ও দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
১৩ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দেন পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে অভিযোগ করে দেশের ভবিষ্যৎ বাঁচানোর দাবিতে ২৪ নভেম্বর অর্থাৎ রোববার তিনি এ কর্মসূচির দিন ঠিক করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী সারা দেশ থেকে পিটিআই নেতাকর্মীরা রাজধানী ইসলামাবাদের ডি চক এলাকায় সমাবেশ করবেন।
এই রেড জোনে আছে পার্লামেন্ট ভবন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা, দূতাবাস এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়। শনিবার এক ভিডিও বার্তায় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর বলেন, ‘আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ইমরান খান আমাদের সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।’
পিটিআইর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমরান খানসহ তাদের সব নেতার মুক্তি এবং চলতি বছর কারচুপির নির্বাচনের কারণে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ।
পিটিআই যাতে এ কর্মসূচি পালন করতে না পারে, সেজন্য ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে আদালতও এ কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক দফা পিটিআইর কর্মসূচি বানচাল করলেও এবার তারা নিজ অবস্থানে অনড়। কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল রোববার সকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ির বহর রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করে।
রাজধানীতে যাতে কোনো গাড়িবহর ও ইমরান সমর্থকরা ঢুকতে না পারেন, সেজন্য প্রত্যেক প্রবেশপথ বড় বড় কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামনে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। খাইবার পাখতুনখোয়ায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে পিটিআই। সেখান থেকে রোববার একাধিক র্যালি নিয়ে ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে বিক্ষোভকারীরা যেন ইসলামাবাদে প্রবেশ করতে না পারেন, তাই জিটি রোড এবং হাসান আবদাল নামক এলাকায় শক্ত অবস্থানে নিয়েছে পুলিশ।
দেশটিতে হোয়াটসঅ্যাপের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের ইন্টারনেট ট্র্যাকিং মনিটর নেটব্লকস। স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে এক্সের এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পাঞ্জাব, লাহোর থেকে ইসলামাবাদে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় কার্যত অঞ্চলগুলোর সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক প্রাদেশিক রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
খান এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে ১৫০ টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। কিন্তু তিনি এখনও জনপ্রিয় এবং তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই বলছে, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।