টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা ভাষাভিত্তিক একগুচ্ছ সফটওয়্যার নিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ২২ জুলাই , মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ‘প্রতিবন্ধিতা অতিক্রমণে প্রযুক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।
বাক, শ্রবণ ও অন্ধ প্রতিবন্ধীরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তিতে তাল মেলাতে পারে সেজন্য বাংলা ভাষায় স্ক্রিন রিডার, ব্রেইল কনভার্টার ও ইশারা ভাষা ডিজিটাইজেশনভিত্তিক সফটওয়্যার শীঘ্রই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কর্মশালায় ইশারা ভাষার একটি ডেটাসেট উন্মুক্ত করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ” প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব জনাব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ফাউন্ডার ট্রাস্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী। কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষক, শিক্ষক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধি ও অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় বাংলা ইশারা ভাষার ডেটাসেট এখন থেকে https://huggingface.co/datasets/banglagov/Ban-Sign-Sent-9K-V1 এই ঠিকানা থেকে উন্মুক্তভাবে ব্যবহারের জন্য পাওয়া যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “প্রযুক্তিগত সমতা প্রতিষ্ঠায় অ্যাক্সেসিবিলিটি একটি মৌলিক বিষয়। প্রতিবন্ধিতাকে উপেক্ষা করে নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে তা অতিক্রম করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই প্রকল্পকে একটি ইন্ডাস্ট্রিতে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার ও একাডেমিয়াকে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, এ জন্য উন্নয়নাধীন বাংলা ভাষায় স্ক্রিন রিডার, ব্রেইল কনভার্টার ও ইশারা ভাষা ডিজিটাইজেশনভিত্তিক সফটওয়্যার খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তিকে কেবল ডিজিটাল অ্যাক্সেস নয়, বরং দক্ষতা, অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মনসুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “আমি ৭ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারাই, তাই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল সংস্করণে অনুষ্ঠান সংক্রান্ত তথ্যপ্রদান একটি আবশ্যকতা”। তিনি যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণাধীন সফটওয়্যারগুলো উন্মুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালার উপস্থাপিত ধারণাপত্র বলা হয়, মানব-কম্পিউটার যোগাযোগের (হিউম্যান-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন) প্রেক্ষাপটে ব্যবহারকারীকেন্দ্রিক ডিজাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। ধারণাপত্রে, বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ রিকগনিশন সিস্টেম, টেক্সট টু সাইন পাপেট, বাংলা টেক্সট টু ব্রেইল, স্ক্রিন রিডার “আলো” এবং টিটিএসভিত্তিক অডিওবুকের তৈরির সার্বিক অগ্রগতি ও অবস্থান উপস্থাপন করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক মোঃ মাহবুব করিম বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন, ইশারা ভাষা সফটওয়্যার এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রযুক্তি ব্যবহার ও যোগাযোগ আরও সহজতর হবে”।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও নির্মাণাধীন সফটওয়্যারগুলোতে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেন। অনূষ্ঠানে ইশারা ভাষার দোভাষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আরাফাত সুলতানা লতা ও আরিফুল ইসলাম।