টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়েছে, যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক ঘোষিত এই বাজেট, দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও টেকসই উন্নয়নের পথে আইসিটি খাতের ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছে।
২০২৫ – ২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের পণ্য ও সেবার মূল্য পরিবর্তনে বেশ কিছু নতুন প্রস্তাবনা এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে দাম কমার সম্ভাবনা থাকলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে খরচ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নিচে এর একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
দাম কমতে পারে/ইতিবাচক প্রভাব:
- ইন্টারনেট সেবা: ইন্টারনেট সেবার ওপর উৎসে কর (Withholding Tax) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেট খরচ কিছুটা কমতে পারে।
- মোবাইল অপারেটরদের টার্নওভার কর: মোবাইল অপারেটরদের টার্নওভার কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে মোবাইল সেবার খরচ কিছুটা কমতে পারে এবং অপারেটররা সেবার মান উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করতে পারে।
- কম্পিউটার মনিটর: ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে বড় আকারের কম্পিউটার মনিটর আরও সাশ্রয়ী হবে।
- লিথিয়াম এবং গ্রাফিন ব্যাটারি: দেশীয় উৎপাদনে লিথিয়াম এবং গ্রাফিন ব্যাটারির উপর ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশের অতিরিক্ত সকল ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হবে। এটি স্থানীয়ভাবে ব্যাটারি উৎপাদনে উৎসাহিত করবে এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
দাম বাড়তে পারে/নেতিবাচক প্রভাব:
- অনলাইন শপিং কমিশন (ই-কমার্স): অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং বিক্রেতাদের উপর চাপ বাড়াবে এবং অনলাইন কেনাকাটার খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ওটিটি (OTT) স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম: ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সেবার ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে নেটফ্লিক্স, চরকি, হইচই-এর মতো স্ট্রিমিং সেবার খরচ বাড়বে।
- অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ এবং সিকিউরিটি সফটওয়্যার আমদানি: এই ধরনের সফটওয়্যার আমদানির ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার কেনার খরচ বাড়বে।
- ল্যাপটপ, এফএমসি প্রিন্টার এবং টোনার কার্তুজ: এসব পণ্যের আমদানিতে বর্তমানে ২৬ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান, যা কমানোর কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। ফলে এই পণ্যগুলোর দাম বেশি থাকবে।
- মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে যে ভ্যাট সুবিধা রয়েছে, তা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং এর মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বাজেটীয় পদক্ষেপ:
- আইসিটি বিভাগের জন্য বরাদ্দ: ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য ২,১৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের (২,৮৭২ কোটি টাকা) তুলনায় ৭২৮ কোটি টাকা কম।
- স্টার্টআপ তহবিল: আইসিটি খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকার একটি স্টার্টআপ তহবিল প্রস্তাব করা হয়েছে।
- ডিজিটাল ল্যাব ও স্কুল অফ ফিউচার: সারাদেশে ৫,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটিডি ডিজিটাল ল্যাব এবং ৩০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটিডি স্কুল অফ ফিউচার স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, যা ডিজিটাল শিক্ষায় বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়।
- ডিজিটাল স্বাক্ষর: সরকারি কার্যক্রমে অধিকতর নিরাপত্তা ও গতিশীলতা আনতে ডিজিটাল স্বাক্ষর চালুর কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, যদিও বাজেট ইন্টারনেট সেবাকে আরও সহজলভ্য করতে এবং স্থানীয় ব্যাটারি উৎপাদনে সহায়তা করতে চাইছে, তবে অনলাইন কেনাকাটা, ওটিটি সেবা এবং কিছু আমদানি করা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের খরচ বাড়তে পারে। এসব পরিবর্তন ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মিশ্র প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।