টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রস্তাবিত নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালার তীব্র বিরোধিতা করেছে দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।
তাদের আশঙ্কা, এই খসড়া কার্যকর হলে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম প্রায় ১৮.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আইএসপিএবি সতর্ক করে বলেছে, এই পদক্ষেপ দেশের প্রায় ২,৭০০ দেশীয় আইএসপি-কে মারাত্মক আর্থিক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
সোমবার ,৩ নভেম্বর, ২০২৫ ঢাকার রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি এই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
আইএসপিএবি মূলত ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এফটিএসপি) জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া নীতিমালার বিরোধিতা করছে। বিটিআরসি’র প্রস্তাবিত নীতিমালায় বেশ কিছু নতুন আর্থিক বাধ্যবাধকতা যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে:
- রেভিনিউ শেয়ার: এফটিএসপি অপারেটরদের ৫.৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার দিতে হবে।
- সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল: ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের জন্য দিতে হবে।
- ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি: সব মিলিয়ে অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম এই নীতি পরিবর্তনের সমালোচনা করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের টেলিকম নীতিগুলো তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং এখন আর জনস্বার্থের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার খাতটি থেকে মোট ২১.৪৫ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ করে (সাবমেরিন কেবল, আইআইজি, আইটিসি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব, রাজস্ব ভাগাভাগি, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ভ্যাটসহ), কিন্তু নতুন নীতিমালায় সরকারের মোট অংশ বেড়ে প্রায় ৪০.২৫ শতাংশে দাঁড়াবে।
ক্ষুদ্র আইএসপিদের অস্তিত্বের সংকট
ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন কারণ এই নতুন আর্থিক বোঝা, টেলিকম অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস (এফডব্লিউ) এবং হটস্পট সুবিধা সম্প্রসারণের সাথে মিলিত হয়ে ছোট, দেশীয় আইএসপি-গুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
আমিনুল হাকিম সরকারের নীতিকে ‘ভুল পথে যাওয়া’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত নীতিমালা শহর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। একদিকে তারা ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলে, অন্যদিকে তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত এটিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।”
লাইসেন্সিং ফিতে বৈষম্যের অভিযোগ
আইএসপিএবি সভাপতি লাইসেন্সিং ফির ক্ষেত্রেও দেশীয় ও বৈশ্বিক কোম্পানির মধ্যে অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ তোলেন। তিনি প্রশ্ন করেন: “স্টারলিংকের জন্য সরকার মাত্র ১০ হাজার ডলার [প্রায় ১২ লক্ষ টাকা] লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করেছে, যেখানে স্থানীয় আইএসপিদের ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হয়। একটি বৈশ্বিক কোম্পানিকে কেন এমন অগ্রাধিকারমূলক আচরণ করা হচ্ছে?”
মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড কানেক্টিভিটি অনুমোদন
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রস্তাবিত খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইএসপিএবি মনে করে, এটি দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে এবং যার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপরও।

