টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃদেশের প্রথম এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্যাটেলাইট ‘বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১’ প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো মুনাফা অর্জন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার নীট মুনাফা করে, যা পূর্বের বছরের সব লোকসানকে উল্টে দিয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর কোম্পানির বোর্ড এই নিরীক্ষিত হিসাব অনুমোদন করে।
২০১৮ সালে বড় প্রত্যাশা নিয়ে উৎক্ষেপণ হলেও দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের মুখ দেখেছে এই স্যাটেলাইটটি। তবে এবার মাত্র ৫০% ক্ষমতা ব্যবহার করেই এটি মুনাফার মুখ দেখলো। বিএসসিএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী ইমাদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমরা অব্যবহৃত ক্ষমতা দেশে ও বিদেশে বিক্রির জন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছি।”
কোথা থেকে আয়?
স্যাটেলাইটটির মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে এখন বাণিজ্যিকভাবে সক্রিয় আছে ২৬টি। টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও স্টেশন, ডিটিএইচ অপারেটর, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে বিএসসিএল-এর আয় হয়েছে ১৮৭ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৯.২৪% বেশি।
এছাড়া, ফিক্সড ডিপোজিট ও ব্যাংক জমার সুদ থেকে নন-অপারেটিং আয় ৫৮% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা সামগ্রিক মুনাফার একটি বড় চালিকাশক্তি। অপারেটিং লাভও প্রথমবারের মতো হয়েছে ২.৬১ কোটি টাকা।
আরও লক্ষ্য উচ্চ
ইমাদুর রহমান জানান, “বিশ্বব্যাপী একটি স্যাটেলাইট তখনই সফল বিবেচিত হয় যখন তার ক্ষমতার ৮০% ব্যবহার হয়। আমাদের লক্ষ্য এখন ব্যবহারের হার সেই স্তরে নিয়ে যাওয়া।” তিনি বলেন, স্টারলিংকের অনুমোদিত পুনঃবিক্রয়কর্তা হিসাবে নতুন ভূমিকা কোম্পানির জন্য একটি সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
বিস্তৃত হচ্ছে পরিষেবা
শুধু সম্প্রচার নয়, স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ডেটা কানেক্টিভিটি, সামুদ্রিক ও বিমান চলাচল সেবা, জরুরি যোগাযোগ এবং সরকারি-বেসরকারি ক্লায়েন্টদের জন্য কাস্টমাইজড সমাধানের দিকেও বিস্তৃত হচ্ছে বিএসসিএল। পোস্ট ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে গঠিত এই কোম্পানি ২০১৮ সালে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর পূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দীর্ঘমেয়াদী সক্ষমতা শক্তিশালী করতে বিএসসিএল বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়িয়েছে দক্ষ স্যাটেলাইট প্রকৌশলী ও মহাকাশ প্রযুক্তিবিদ তৈরির জন্য। ইতিমধ্যেই পরিকল্পনায় রয়েছে ‘বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-২’। পূর্বাভাস, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রিমোট সেন্সিং ও জাতীয় নিরাপত্তায় উন্নত প্রয়োগের জন্য এই স্যাটেলাইটের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সরকার।


