টেকসিঁড়ি ফিচারঃ গুগল টিভি (Google TV) বর্তমান সময়ের স্মার্ট বিনোদনের এক আধুনিক নাম। এটি কোনো আলাদা টেলিভিশন সেট নয়, বরং এটি একটি স্মার্ট টিভি ইন্টারফেস বা সফটওয়্যার যা আপনার টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ ও আরোও রোমাঞ্চকর।
দীর্ঘ বিবর্তন এবং প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির ফলে ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই যাত্রা আজ ২০২৫ সালে এসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছে। গুগল টিভি মূলত একটি স্মার্ট টিভি প্ল্যাটফর্ম যা গুগল, ইন্টেল, সনি এবং লজিটেক মিলে তৈরি করেছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল ইন্টারনেটের সাথে সাধারণ টিভিকে যুক্ত করা। আজকে আমরা গুগল টিভির শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই রোমাঞ্চকর যাত্রা সম্পর্কে জানবো। বিস্তারিত লিখেছেন সামিউল হক সুমন।
১. শুরু এবং প্রথম ধাপ (২০১০ – ২০১৩)
গুগল টিভির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৬ অক্টোবর, ২০১০ সালে। তখন এটি একটি অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক ইন্টারফেস হিসেবে বাজারে আসে। ২০১০ সালে সনি (Sony) এবং লজিটেক (Logitech) গুগল টিভির প্রথম ডিভাইসগুলো লঞ্চ করে। তখন এর মূল আকর্ষণ ছিল গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে টিভিতে ইন্টারনেট চালানো এবং নেটফ্লিক্স দেখা। প্রথম দিকে এর রিমোট অনেক জটিল ছিল এবং ইন্টারফেসটি সাধারণ মানুষের জন্য খুব একটা সহজ ছিল না।
২. অ্যান্ড্রয়েড টিভি যুগে রূপান্তর (২০১৪ – ২০১৯)
২০১৪ সালে গুগল তাদের টিভি প্ল্যাটফর্মে আমূল পরিবর্তন আনে। গুগল টিভির নাম বদলে রাখা হয় অ্যান্ড্রয়েড টিভি (Android TV)। এটি অনেক বেশি সহজ এবং ‘অ্যাপ-কেন্দ্রিক’ (App-centric) হয়ে ওঠে। গুগল প্লে স্টোর থেকে সরাসরি গেম এবং অ্যাপ ডাউনলোডের সুবিধা যুক্ত হয়। এই সময়েই গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্ত হয়, ফলে রিমোট ছাড়াই কথা বলে চ্যানেল পরিবর্তনের সুবিধা আসে।
৩. নতুন গুগল টিভির পুনর্জন্ম (২০২০ – ২০২৩)
২০২০ সালে গুগল পুনরায় তাদের সেই পুরোনো ব্র্যান্ডিং ‘Google TV’ নাম ফিরিয়ে আনে। তবে এবারের সংস্করণটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আধুনিক। নতুন সংস্করণে কন্টেন্ট-ফার্স্ট ইন্টারফেস একটি ফিচার নিয়ে আসে যেটা অ্যাপের চেয়ে কন্টেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অর্থাৎ আপনাকে আলাদা আলাদা অ্যাপে ঢুকতে হবে না, হোম স্ক্রিনেই সব মুভি সাজানো থাকে।
৪. আধুনিক যুগ: এআই এবং স্মার্ট হোম (২০২৪ – ২০২৫)
বর্তমান ২০২৫ সালে গুগল টিভি শুধুমাত্র একটি মুভি দেখার মাধ্যম নয়, এটি এখন একটি এআই-চালিত (AI-powered) স্মার্ট হাব। বর্তমান সময়ে গুগল টিভিতে জেমিনাই এআই যুক্ত করা হয়েছে। এটি আপনার রুচি অনুযায়ী সিনেমার সারসংক্ষেপ তৈরি করে দেয় এবং কী দেখবেন তা পছন্দ করতে সাহায্য করে। এখন টিভির রিমোট দিয়েই বাসার লাইট, ফ্যান বা সিকিউরিটি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সবশেষ
শুরুতে এটি ছিল সাধারণ একটি ওয়েব ব্রাউজার চালিত টিভি বক্স, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিনোদন ইকোসিস্টেম। গুগল টিভির এই ১৩-১৪ বছরের যাত্রা প্রমাণ করে যে কীভাবে প্রযুক্তি আমাদের ড্রয়িং রুমের বিনোদনের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে।


