টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : এখন থেকে বাংলাদেশে অনার ব্র্যান্ড স্মার্টফোন উৎপাদন করবে। প্রতিষ্ঠানটি ২ একর জমিতে নির্মিত অত্যাধুনিক উৎপাদন অবকাঠামোতে প্রায় ১২০ কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এই ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে স্মার্টফোনের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট অ্যাসেম্বলি, টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত হাইটেক পার্কে তিনটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কমার্শিয়াল অপারেশন ও নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ডিভাইস শিল্পের বিনিয়োগ সুরক্ষা দিবে সরকার। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন যাত্রার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। এই যাত্রায় দক্ষতা উন্নয়ন, শিল্প ও একাডেমিয়ার দক্ষতার ব্যবধান কমানো অত্যন্ত জরুরি। একইসঙ্গে আমাদের তরুণদের মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি করাও বড় লক্ষ্য।
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, যদি আমরা দেশের ডিভাইস শিল্পের দিকে তাকাই, দেখি স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রায় ৪১–৪৫ শতাংশ। ২০২১ সালে বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু ভুল নীতি ও কিছু অবৈধ আমদানির কারণে এ সংখ্যা কমে বছরে প্রায় ৮ বিলিয়নে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে মোবাইল উৎপাদনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, সরকার সর্বদা এই শিল্পের পাশে থাকবে যাতে এটি আরও বিকশিত হতে পারে এবং বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, বর্তমানে আমরা অবৈধ স্মার্টফোন আমদানি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর (NEIR) সক্রিয় হবে। একইসঙ্গে আমদানি শুল্ক কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা হবে যাতে স্থানীয় উৎপাদন সুরক্ষিত থাকে। ডিভাইস শিল্পের সাফল্য নির্ভর করে বৈধ স্থানীয় উৎপাদন ও বৈধ আমদানির মধ্যে সঠিক ভারসাম্যের ওপর। আমরা যদি কর কাঠামোকে যৌক্তিক করি, তবে আরও অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের হার আগামী কয়েক বছরে ৭০–৮০ শতাংশে পৌঁছাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি বলেন, কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক এখন দেশের প্রযুক্তি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং নতুন নতুন বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিকে সক্ষমতার নতুন স্তরে উন্নীত করবে।
উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে প্রথমে কমার্শিয়াল অপারেশন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয় স্মার্ট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের। বাংলাদেশে অনার ব্র্যান্ড স্মার্টফোন উৎপাদন করবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ধাপে ৮০০ থেকে ১০০০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, টিভি, নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম, স্পিকার এবং ক্যামেরাসহ আরও বিস্তৃত ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা দেয়া হয় হেভেন্স লাইট প্রাইভেট লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২.৫ একর জমিতে AI ও IoT–ভিত্তিক স্মার্ট লাইটিং এবং হোম অটোমেশন পণ্য উৎপাদনের জন্য উন্নত মানের কারখানা নির্মাণ করছে। প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট লাইট, স্মার্ট সুইচ, ড্রাইভার, কন্ট্রোল বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার আগামী এক বছরে তারা প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং ৩০০–৪০০ জনের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
উদ্বোধন হওয়া তৃতীয় প্রতিষ্ঠান Bangla Cars, যা দেশের খ্যাতনামা হোসেন গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। তারা পার্কে নতুন কারখানা নির্মাণে হাত দিয়েছে, যেখানে সম্পূর্ণ দেশীয় ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এবং ৫০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) এর প্রথম ও অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি–উদ্যোক্তা অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কে ইতোমধ্যে বহু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে।
অত্যাধুনিক অবকাঠামো, প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে সুবিধা, উন্নত সংযোগ ব্যবস্থা এবং ম্যানুফ্যাকচারিং-সমর্থিত পরিবেশের কারণে এটি এখন দেশের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং, IoT প্রসেসিং ও অটোমেশনসহ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিল্প স্থাপনে পার্কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অনুষ্ঠানে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া, বিটিআরসি পরিচালক এমডি নুরুন্নবি, স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, অনর বাংলাদেশের কন্ট্রি ডিরেক্টর লেঙ গুও, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ডেরিক জর্জ ঝেঙ, সাপ্লাই চেইন বিভাগের চেয়ারম্যান ডেরিক ডেঙ, স্মার্ট বাংলাদেশের মোবাইল বিভাগের বিজনেস ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


