টেকসিড়ি রিপোর্টঃ বহুল আলোচিত ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), যা এতদিন ফোনে আড়ি পাতা এবং ডেটা পর্যবেক্ষণের কাজ করত, তা বিলুপ্ত করে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ‘টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী এর নতুন নাম হতে যাচ্ছে সেন্ট্রাল লফুল ইন্টারসেপশন প্ল্যাটফর্ম বা সিএলআইসিপি (CLICP)।
আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, এই নতুন অধ্যাদেশে আইনি নজরদারি বা ‘লফুল ইন্টারসেপশনের’ ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, এই টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশটি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে এবং এটি আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে। অনুমোদন পেলে এনটিএমসির নাম ও কার্যক্রমে এই আমূল পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে এনটিএমসিকে ব্যবহার করে অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বকে হয়রানি করা হয়েছিল। বিশেষ করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের (পরবর্তীতে গ্রেপ্তার) সময়কালে এই সংস্থাটির যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে গুরুতর বিতর্ক ছিল। এই প্রেক্ষাপটেই পুরোনো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে সিএলআইসিপি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে যা থাকছে ঃ
প্রস্তাবিত ‘টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে:
বিলুপ্তি ও স্থানান্তর (ধারা ৯৭-গ):অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে পূর্বের সব আড়ি পাতা সংস্থা বা প্ল্যাটফর্ম বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। তাদের সমস্ত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নতুন সিএলআইসিপি-তে স্থানান্তরিত হবে। এই প্ল্যাটফর্মের বাইরে অন্য কোনো উপায়ে আড়ি পাতার চেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি হিসেবে বিবেচিত হবে।
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (ধারা ৯৭-ক):নজরদারি কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। সংস্থাটি পরিচালনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বিধিমালা জারি করা হবে।
আড়ি পাতার অনুমোদন প্রক্রিয়া:দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য আড়ি পাতার সুযোগ থাকবে। তবে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার জন্য একটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কাউন্সিলে মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ৫-৬টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি দেখভাল করবে।
শাস্তি ও সুরক্ষা: সিএলআইসিপি-তে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো প্রবেশাধিকার থাকবে না। এই কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কেউ আড়ি পাতলে তার জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের ১৮টি সংস্থা (যার মধ্যে পুলিশের সাতটি সংস্থা রয়েছে) এনটিএমসি’র সুবিধা ব্যবহার করে ফোনে নজরদারি করে আসছে।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদুল বারী এই উদ্যোগকে কমিশনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং টেলিকম খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন।


