টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : মহাকাশ গবেষণায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে এবং দীর্ঘমেয়াদী চন্দ্র অভিযানের শক্তির উৎস নিশ্চিত করতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
রাশিয়া আগামী এক দশকের মধ্যে (২০৩৬ সালের মধ্যে) চাঁদে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস, পারমাণবিক কর্পোরেশন রোসাটম এবং চীন যৌথভাবে এই প্রকল্পে কাজ করছে।
কেন দরকার পারমাণবিক শক্তি ? রোভার পরিচালনা, চন্দ্র মানমন্দির এবং রাশিয়ার নিজস্ব অবকাঠামোসহ ‘আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্রে’ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এটি প্রয়োজন। এককালীন মিশনের বদলে চাঁদে স্থায়ীভাবে বৈজ্ঞানিক স্টেশন তৈরি করা এবং পরবর্তী ধাপে শুক্র গ্রহ অন্বেষণ করা।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
নাসাও পিছিয়ে নেই। তারাও ২০৩০ অর্থবছরের শুরুর দিকে চাঁদে একটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। শন ডাফির, মার্কিন পরিবহন সচিব স্বীকার করেছেন যে তারা বর্তমানে চীনের সাথে চাঁদে যাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। ভবিষ্যৎ লক্ষ্য চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি এবং সেখান থেকে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর মিশনের জন্য এই শক্তির উৎস অপরিহার্য।
মহাকাশ বিশ্লেষকরা একে চাঁদে ‘সোনার ভিড়’ (Gold Rush) হিসেবে দেখছেন। কারণ :
চাঁদে প্রায় ১০ লক্ষ টন হিলিয়াম-৩ আছে বলে ধারণা করা হয়, যা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিরল কিন্তু শক্তির উৎস হিসেবে অমূল্য। স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও উন্নত প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডের মতো বিরল ধাতু সেখানে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
২০২৩ সালে রাশিয়ার ‘লুনা-২৫’ মিশনের ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে চাঁদের পৃষ্ঠে সফল অবতরণ ও অবকাঠামো নির্মাণ এখনো অত্যন্ত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ হলেও শক্তির উৎস হিসেবে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনে কোনো সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই, যদি তা নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলে।
এক সময় মহাকাশ জয় ছিল নিছক সম্মানের লড়াই কিন্তু এখন এটি খনিজ সম্পদ এবং স্থায়ী বসতি গড়ার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। রাশিয়া ও চীনের যৌথ প্রচেষ্টা বনাম আমেরিকার নেতৃত্বাধীন এই প্রতিযোগিতা আগামী দশকের বিজ্ঞানে সবচেয়ে বড় উত্তেজনা তৈরি করবে।


