২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ‎ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
টেকসিঁড়ি

বৈষম্য, লুটপাট, দমন পিড়নে ক্ষুব্ধ অনলাইন উদ্যোক্তারা

টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : কি হলো অনলাইন উদ্যোক্তাদের ? নারী বা পুরুষ তারা সকলে মুখ খুলতে শুরু করেছে কেন? জুলাই মাসের কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, প্রতিবাদের ঝড় কি তবে তাদের ভেতরের ঝড়কে উসকে দিয়েছে ? হ্যা, হয়ত ছাত্রদের আন্দোলনের হাওয়া অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপের দমন, পীড়ন , চাঁদা বাজি , লুটপাট আর বঞ্চনার কথাগুলো স্পষ্ট করে লিখতে উদ্দিপ্ত করেছে।

দেশের ক্রাইসিস মুহুূর্তে অনলাইন উদ্যোক্তাদের হতাশা ছিল তাদের নেতা, নেত্রীদের কোন পোস্ট না পাওয়া। ছাত্রদের নিয়ে একটি বাক্যও লিখতে দেখতে না পেয়ে অনেকেই বয়কট হ্যাস ট্যাগ ইউজ করেন। ক্ষোভে ফুসে ওঠেন , সুবিধাবাদি তকমা জুড়ে দেন। শুধু তাই নয় এদের দেশদ্রোহি আখ্যা দেন।

অভিযোগ নামা :

ই-ক্যাবে লুটপাট, নারী উদ্যোক্তাদের অনুদানের নামে অন্তত আড়াই কোটি টাকা লুটে নিয়েছে শমী ও নিশা সিন্ডিকেট

সাবেক সরকারের আইসিটি জুনাইদ আহমেদ মন্ত্রী পলকের পৃষ্টপোষকতায় ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ইক্যাবে রীতিমতো লুটপাট চলেছে গত কয়েকবছরে। মূলত ই-ক্যাবের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সরকারের ঘনিষ্ট শমী কায়সার, নাসিমা আকতার নিশা, রাজিব আহমেদসহ বেশ কয়েকজন ই-ক্যাব নেতা সিন্ডিকেট গঠন করে উদ্যোক্তাদের অনুদান প্রদানের নামে অন্তত আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এছাড়া নিশা’র নেতৃত্বাধীন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) এর সদস্যদের নিয়ে সামিট, ফেস্ট আয়োজন, ট্রেনিং ও মিট আপ আয়োজনের নামে একদিকে সরকার থেকে অনুদান নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। একই খাতে শত শত নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে নিজেদের সম্পদ গড়েছেন।

ই-ক্যাবের নানা দূর্নীতি অনিয়ম ঘটনা একে একে ফাঁস হতে শুরু করলে শমী কায়সার ই-ক্যাব থেকে পদত্যাগ করেন কয়েকদিন আগে। তবে নিশাসহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন।

অভিযোগ আছে- উই-এর নিশা এবং পলকের স্ত্রী কনিকা মিলে ভুয়া কৃষি উদ্যোক্তা গ্রুপ বানিয়ে পলকের মাধ্যমে অন্তত ২০ কোটি টাকা সরকারি অনুদান আত্মসাত করেছে। রাইজিংবিডির চট্রগ্রাম ব্যুরো চিফ মো. রেজাউল করিম ফেইসবুকে এমন সব অভিযোগ জানান।

অনুদান এবং আরও কথকতা

অভিযোগ আছে, ব্যবসা উন্নয়ন ও ওয়েবসাইট বানিয়ে দেওয়ার নামে পলকের সহযোগীতায় নাসিমা আকতার নিশার নেতৃত্বে দেশের ২ হাজার উদ্যোক্তাকে কাগজে কলমে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান বিতরণ করা হয়। কিন্তু এই অনুদানের টাকা থেকে নাসিমা আকতার নিশার সিন্ডিকেট প্রতি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা করে কেটে রাখেন ওয়েবসাইট বানিয়ে দেওয়ার নামে। কিন্তু বিগত এক বছরেও কোন উদ্যোক্তাকে ওয়েবসাইট বানিয়ে দেওয়া হয়নি। আবার এমন সব উদ্যোক্তাকে অনুদান দেওয়া হয়েছে যারা প্রতিষ্ঠিত , দামি গাড়িতে চড়েন, প্রতিমাসে বিদেশ ট্যুর করেন।

রিপানুর ইসলাম বলেন, এই অনুদান পেতে উইতে সাবেস্ক্রাইবার হতে হয়েছে সেখানে ৩০৬০ টাকা এবং রিনিউ ২০৪০ টাকা, কারণ উই থেকে অনুদান পাওয়ার ব্যাপারটি ছিল যারা সাবস্ক্রাইবার হবে শুধু মাত্র তারাই পাবে এমন। আর কি যে সাবস্ক্রাইবার বেনিফিট এবং অনুদান পেতে যে স্টাম্প নিতে হয়েছে সেখানে ৫০০-৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

উম্মে হানি বলেন, আমাকে প্রি এপ্রুভাল দিবে বলে ৩০৬০ টাকায় সাবসক্রাইবার করিয়েছে, বাট এপ্রুভাল তো দেয়নি বরং তার বছর খানিক পর গ্রান্টের টাকা নিতে হলে রিনিউ সাবসক্রাইবার করিয়ে ২০৪০ টাকা নিয়েছে, নেওয়ার কয়েকদিন পর আমাকে স্পন্সর হতে বলে আমি হইনি বলে আমাকে বিভিন্ন অজুহাতে পোস্ট এপ্রুভ করা বন্ধ করে দেয়, এবং বিভিন্ন ভাবে চাপ দেয়, বলে, এক্টিভ থাকলে হবেনা, আমি সামিটে, মিটআাপে অংশ গ্রহন করি না, আরো ইত্যাদি, পরে অতিষ্ঠ হয়ে চলে আসি, কিন্তুু আমার রিনিউর টাকাটা ধার করে দিছিলাম, বাট একটা সেল ও না হওয়ায় আমার সেই টাকা শোধ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো।

একটি উদাহারন

নওরিন’স মিরর নামক একটি ই-কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন হোসনে আরা খান নওরিন। ২০১৮ সাল থেকে ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে নওরিনের ‘নওরিন’স মিরর’। নওরিন একজন সফল উদ্যোক্তা ও নারী নেত্রী হিসেবে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন। ই-ক্যাবের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক স্ট্যাডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন নওরিন। পরের মেয়াদে মেম্বার অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। এই নারী উদ্যোক্তার পারিবারিক মালিকানায় রয়েছে ১৫০০ সিসির দামি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-২৮-****)। প্রায়ই দেশে ও দেশের বাইরে বিলাসবহুল ভ্রমণে যান। ২০২২ সালে ই-ক্যাবের একাংশের সাথে সফর করেন ভারতের কাশ্মির। ই-ক্যাবের পিকনিকে পৃষ্ঠপোষকতাও করেন অনুদান নেওয়া এই নওরিন।

আর্থিকভাবে এতটা স্বচ্ছল হলেও সরকারি ৫০ হাজার টাকা অনুদান নেওয়ার প্রয়োজন হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নওরিন বলেন, এটা তো এমন ছিল না যে যারা গরীব বা দুস্থ শুধু তারাই অনুদান পাবে। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।

অনুদানের টাকা দিয়ে কী করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নওরিন বলেন, ওয়েবসাইট করেছি এবং কিছু ব্যবসার কাজে ব্যয় করেছি। কিন্তু ওয়েবসাইট বিশ্লেষণী প্ল্যাটফর্ম ‘হু ইজ’ এর তথ্যমতে, ২০২০ সালেই তৈরি হয় নওরিন’স মিররের ওয়েবসাইট। অর্থ্যাত অনুদান পাওয়ার অনেক আগে।

এভাবে নানা প্রতারণার মাধ্যমে এবং পলকের পৃষ্টপোষকতায় উদ্যোক্তাদের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন শমী-নিশা-রাজিব সিন্ডিকেট। পলক গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে রিমান্ডে থাকলেও নিশা-রাজিবগং এখনো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বেড়াচ্ছেন বোল পাল্টিয়ে।

জিআই, ইডিসি এবং অনলাইন ক্লাস পর্ব

তাজনিন নাহার ইশাক বলেন, রাজিব আহমেদ সবকিছুর মূল হোতা। শমী কায়সার বা নাসিমা আক্তার নিশা অথবা কাকলী তালুকদারকে রাজিব আহমেদ তৈরি করেছে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। এদেরকে ফ্রন্টলাইনে রেখে নিজে আড়ালে থেকে বিগত স্বৈরাচারী শাসনের আমলে অস্বাভাবিকভাবে লুটপাট করেছে। এই লোকের চলনে-বলনে এসব ভণ্ডামি বোঝার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই, তবে এটা মূলত মানুষের চোখকে ধূলা দেওয়ার একটা কৌশলমাত্র। যখনি এই চক্রের মধ্যে টাকা-পয়সার লেনদেনে ঝামেলা হয়েছে, তখনই রাজিব আহমেদকে সেই গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, এরপর রাজিব আহমেদ আরেকটা চক্র রেডি করে এখন ইডিসি চালায় যেটা দেশের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে ফোকাস করে এগুলোর জিআই ডকুমেন্টেশন নিয়ে ২০২৩ থেকে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছে। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা তাদের মেধা, শ্রম, সময়, অর্থ, এমনকি কারো কারো পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঘটনা উঠে এসেছে। অথচ এই রাজিব আহমেদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ফেইসবুকে এখনো বহাল তবিয়তে আছে।

তিনি বলেন, নতুন ও ভালো কিছু শেখার আশায় সপ্তাহে ৩০০ টাকা করে নিয়মিত স্টোরি টেলিং ক্লাসগুলো করার পর বছর শেষে হিসেব করে দেখবেন আপনার পকেট থেকে ইতিমধ্যেই ১৪,৪০০ টাকা বেরিয়ে গেছে। একইসাথে বুঝতে পারবেন যে, শেখানোর নামে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা আপনি রাজিব সাহেবের মুখে কোন না কোন ইভেন্টে শুনছেন বা তার পোস্টে পড়ছেন, আবার স্টোরি টেলিং ক্লাসেও শুনছেন। এই টাকাগুলো কার পকেটে যায় তা কারোরই অজানা নয়। রাজিব সাহেব টাকা নেন না বলে দাবি করেন, অথচ এই পুরো টাকা রাজিব সাহেব ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের পকেটে যায়। দিনশেষে, স্যাডলি, আপনি দিনের পর দিন রাতের ঘুম হারাম করে টাকা খরচ করেও নিজের ব্যবসার উন্নতিতে কাজে লাগবে এমন কিছুই শিখতে পারেন না। আবার পান থেকে চুন খসলেই ৫০-১০০ মানুষের উপস্থিতিতে কটু বা উস্কানিমূলক কথা শোনাতে এনার বা এনার সাঙ্গপাঙ্গদের বাধে না! যা-ই হোক, এই তথাকথিত ক্লাসগুলোকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ইউজলেস মনে করি।

তাজনিন বলেন, সকল মন্দের ভালো একটাই – বেলা বিস্কুটের জিআই ডকুমেন্টের তথ্য সংগ্রহ আমরা ৩ জন মিলে করেছি, ডকুমেন্ট রেডি করেছি আমি একাই, এই ডকুমেন্ট করতে গিয়ে আমি খাগড়াছড়ি টু চট্টগ্রাম দৌড়াদৌড়ি করে যতটা পরিশ্রম করেছি তা আমার ২ জন সহকর্মীই দেখেছেন, আমার কাজে কখনো অলসতা বা গাফিলতি কোনটাই ছিলো না এবং এই পুরো জার্নিতে যা অর্থব্যয় হয়েছে তা আমরা নিজেরা মিলে করেছি। কোনভাবেই কোন তথাকথিত লিডারশীপের আশায় নয় (অন্তত আমার ক্ষেত্রে তা-ই)। তবে জিআই নিয়ে মূল কন্ট্রোভার্সিটা হচ্ছে – “সারাদেশে নিজেদের মেধা, শ্রম, সময় ও অর্থব্যয়ে জিআই -এর তথ্য সংগ্রহ ও ডকুমেন্টেশন করেছি আমরা দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারা, আর প্রথম আলোর ফিচারে জিআই যোদ্ধা হিসেবে নাম আসে কেবলমাত্র ইডিসি টিমের।

তিনি বলেন, যেখানে জিআই নিয়ে আমরা পড়াশোনা করেছি, আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি, আমরা ডকুমেন্টেশন করেছি, সেখানে জিআই সংবলিত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারগুলোতে আমাদের কোন জায়গা হয় না, অথচ সেখানে গিয়ে হিরো সাজে এই তথাকথিত দেশপ্রেমিক লিডার রাজিব সাহেব ও অন্যের শাড়ি ধার করে পরে পার্লার থেকে সেজে যাওয়া তার নারী সাঙ্গপাঙ্গরা।” এই ইডিসি বা কোন বিশিষ্ট কাউকে টাকা দিয়ে ডকুমেন্ট বা ম্যাপ করে দেওয়ার সুযোগ আমি দেইনি (আমাদেরকে রাজিব সাহেব প্রস্তাব দেয়, টাকা দিলে তার লোক দিয়ে ডকুমেন্ট বা ম্যাপ করে দেবে, আমরা শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করে দিলে হবে)। এক্ষেত্রে আমি শক্ত হাতে লাগাম ধরে রেখেছিলাম বলেই আজপর্যন্ত এরা কোথাও জোর দিয়ে প্রচার করতে পারেনা, বেলা বিস্কুটের ডকুমেন্ট এরা করেছে বা সহায়তা করেছে!! কারণ আমি খুব ভালো করে জানতাম, এরা এই ডকুমেন্ট জাস্ট হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলেই এদেরকে নতুন কোন লোক ঠকানো কৌশল বা প্রতারণা করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। সত্যি বলতে, আরো অনেক ক্ষত আছে যা এখনো শুকায়নি, আদৌ শুকাবে কি-না জানি না!

পুশ সেলের কথা উদাহরণ সহ বলেন একাধিক উদ্যোক্তা।

অন্য একজন বলেন, এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এই সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার কৌশল ই-ভ্যালীর প্রতারণার গল্পকেও হার মানাতে বাধ্য। এখন একটাই চাওয়া – দেশ সংস্কারের সময়ে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির এই কালপ্রিট লিডার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকে বিচারের আওতায় আনলে উদ্যোক্তাগোষ্ঠী হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারবে।

Related posts

ওপেনএআই-এর জিপিটি-৫ উন্মোচন, ব্যবহার করা যাবে বিনামূল্যে

TechShiri Admin

উন্নত এআই ক্যামেরা অ্যালগরিদমে ইনফিনিক্স ও স্যামসাং-এর পার্টনারশিপ

Tahmina

APNIC ফেলোশীপের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া চলছে

Samiul Suman

Leave a Comment