26 C
Dhaka
৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ‎ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ৪ঠা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
টেকসিঁড়ি

এআরপি: নেটওয়ার্কিংয়ের একটি মৌলিক প্রোটোকল

সামিউল হক সুমনঃ নেটওয়ার্কিংয়ের জগতে যোগাযোগের সহজলভ্যতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন প্রোটোকল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অ্যাড্রেস রেজোলিউশন প্রোটোকল বা এআরপি (ARP) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি ডাটা লিংক লেয়ার (Layer 2) প্রোটোকল যা আইপি অ্যাড্রেস থেকে ম্যাক (MAC) অ্যাড্রেস নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এআরপি ছাড়া, লোকাল নেটওয়ার্কের ডিভাইসগুলোর মধ্যে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত।

ARP কীভাবে কাজ করে?
ARP প্রোটোকল মূলত একটি টেবিল ব্যবহার করে কাজ করে, যাকে ARP ক্যাশে বলা হয়। এই টেবিলে লোকাল নেটওয়ার্কের প্রতিটি ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেস এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাক অ্যাড্রেস সংরক্ষিত থাকে।


ARP কাজ করার ধাপসমূহ:


প্রথম ধাপ: ARP রিকোয়েস্ট
যখন কোনো ডিভাইস নেটওয়ার্কে কোনো অন্য ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তখন এটি ARP রিকোয়েস্ট পাঠায়। এই রিকোয়েস্ট ব্রডকাস্ট মেসেজ আকারে নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, “কে 192.168.1.1-এর মালিক? দয়া করে আমাকে আপনার ম্যাক অ্যাড্রেস জানান।”

দ্বিতীয় ধাপ: ARP রিপ্লাই
যে ডিভাইসটি রিকোয়েস্টের সাথে মেলে তার আইপি অ্যাড্রেস, সেটি তার ম্যাক অ্যাড্রেস সহ ARP রিপ্লাই পাঠায়। উদাহরণস্বরূপ, “আমি 192.168.1.1 এবং আমার ম্যাক অ্যাড্রেস হলো XX:XX:XX:XX:XX:XX।”

তৃতীয় ধাপ: ক্যাশে সংরক্ষণ
যোগাযোগের সুবিধার্থে, ডিভাইসটি এই তথ্যটি ARP ক্যাশেতে সংরক্ষণ করে রাখে, যাতে ভবিষ্যতে একই তথ্য পুনরায় খুঁজতে না হয়।

ARP-এর প্রকারভেদ
ARP বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

গ্রেটুইটাস ARP (GARP):
একটি ডিভাইস নিজেকে নেটওয়ার্কে পরিচয় করানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। এটি অন্য ডিভাইসকে জানায় যে তার আইপি অ্যাড্রেস এবং ম্যাক অ্যাড্রেস কী।

প্রক্সি ARP:
এক ডিভাইস অন্য ডিভাইসের হয়ে ARP রিপ্লাই পাঠায়। সাধারণত এটি রাউটার বা গেটওয়ে ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।

রিভার্স ARP (RARP):
একটি ডিrভাইস তার নিজস্ব IP ঠিকানা আবিষ্কার করতে RARP ব্যবহার করে যদি এটি শুধুমাত্র তার MAC ঠিকানা জানে। RARP এখন নাই বললেই চলে। আর পরিবর্তে এটি ডায়নামিক হোস্ট কনফিগারেশন প্রোটোকল (DHCP) বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।

ইনভার্স ARP (InARP):
এটি MAC অ্যাড্রেস থেকে আইপি অ্যাড্রেস নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণ ARP প্রক্রিয়ার বিপরীত।

ARP স্পুফিং এবং নিরাপত্তা
ARP প্রোটোকলের একটি দুর্বল দিক হলো এটি ARP স্পুফিং আক্রমণের শিকার হতে পারে। এই আক্রমণে, একজন আক্রমণকারী ভুয়া ARP মেসেজ পাঠিয়ে নেটওয়ার্কের ডেটা চুরি করতে পারে। ARP স্পুফিং প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১। স্ট্যাটিক ARP এন্ট্রি ব্যবহার: গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসগুলোর জন্য স্থায়ী এন্ট্রি তৈরি করুন।
২। ডাইনামিক ARP ইনস্পেকশন (DAI): সুইচ এবং রাউটারে এই ফিচার সক্রিয় করলে অননুমোদিত ARP প্যাকেটগুলিকে আটকানো যায়।
৩। ভিপিএন ব্যবহার: নেটওয়ার্ক ডেটা এনক্রিপ্ট করে আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।

সবশেষেঃ ARP প্রোটোকল লোকাল নেটওয়ার্কের যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যদিও এর কিছু দুর্বলতা রয়েছে, সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ARP-এর কাজ এবং এর গুরুত্ব বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকঃ নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি – বাংলাদেশে

Related posts

মাইক্রোটিক: নেটওয়ার্কিং জগতে একটি বিশ্বস্ত নাম

TechShiri Admin

ব্যান্ডউইথ, থ্রুপুট এবং লেটেন্সি সম্পর্কে ধারণা

TechShiri Admin

এসএনএমপি (SNMP): নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টের একটি অপরিহার্য টুল

TechShiri Admin

Leave a Comment