হাজার হাজার বছর ধরে, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের গোপন তথ্য লুকাতে এবং সুরক্ষার জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার হয়ে আসছে। আজকের ডিজিটাল বিশ্বে ডেটা সুরক্ষিত রাখার যত কৌশল আছে ক্রিপ্টোগ্রাফি তার মধ্যে অন্যতম। ক্রিপ্টোগ্রাফি কী এবং এটি কীভাবে অনলাইনে তথ্য নিরাপদ রাখে সেই সম্পর্কেই আজকের বিস্তারিত আলোচনা।
ক্রিপ্টোগ্রাফি কি?
ক্রিপ্টো শব্দের অর্থ হচ্ছে গুপ্ত, মানে কোনকিছুকে গোপন রাখা। ক্রিপ্টোগ্রাফির শব্দের বাংলা অর্থ হলো ‘তথ্যগুপ্তিবিদ্যা’। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যাতে তথ্য গোপন করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। এটি একটি কোড ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য এবং যোগাযোগ রক্ষা করার একটি পদ্ধতি, যাতে শুধুমাত্র যাদের জন্য তথ্যটি পাঠানো কেবল তারাই এটি পড়তে এবং বুঝতে পারে।
ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার:
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং ভার্চুয়াল লাইফে কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার দেখা যায়। যেমন ধরুন আপনি কাউকে একটা ম্যাসেজ পাঠালেন যেমন “I LOVE YOU”। যেহেতু আপনার পছন্দের কাউকে পাঠাতে চাচ্ছেন, তো ম্যাসেজটিকে আপনি কৌশলে উলটাপালটা করে “L OLNH BRX” পাঠালেন যা কেউ ই বুঝতে পারবে না। কিন্তু যার কাছে পাঠাইলেন সে ঠিকই বুঝল কারন সেই ম্যাসেজটি কিভাবে উল্টাপাল্টা করা হয়েছে। মাঝে হয়তো তার পরিচিত কেউ ই চিঠিটি নিয়ে গেলো, কিন্তু সে বুঝলো না। কতই মজার তাইনা? আমাদের ভার্চুয়াল জীবনে আমরা ক্রিপ্টোগ্রাফি প্রতিনিয়তই ব্যবহার করছি, ডিজিটাল সাইনিং, ডেটা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য যাচাইকরণ, ইন্টারনেটে ওয়েব ব্রাউজিং এবং ক্রেডিট কার্ড লেনদেন এবং ইমেলের মতো গোপনীয় যোগাযোগের জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহৃত হয়।
ক্রিপ্টোগ্রাফি এর কিছু টার্মস:
প্লেইন টেক্সট (Plain Text): আমরা সাধারণ যা লেখি এবং যেটা সহজেই পড়া যায় তাকেই প্লেইন টেক্সট বলে।
এনক্রিপশন (Encryption): প্লেইন টেক্সটটাকে দুর্বোধ্য একটা রুপ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা হল এনক্রিপশন।
সাইফার টেক্সট (Cipher Text): এনক্রিপশনের ফলে যে দুর্বোধ্য টেক্সটটা পাওয়া যায়।
ডিক্রিপ্পশন (decryption): সাইফার টেক্সটকে প্লেইন টেক্সট-এ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে বলে ডিক্রিপশন।
কী(Key): কী (Key) অর্থ চাবি, যেটা দিয়ে আমরা তথ্যটি কে গোপন করবো কিংবা লক করবো, এবং সেটিকে নির্দিষ্ট কারো কাছে পাঠাব, যেটা দিয়ে সে ঐ তথ্য কিংবা ডেটাকে খুলতে পারে বা আনলক করতে পারে। সেজন্য দরকার হয় অ্যালগরিদমিক চাবি বা কী এর। এই কী আবার দুই রকমের প্রাইভেট কি এবং পাবলিক কী।
পাবলিক ও প্রাইভেট কী (Public and Private key): পাবলিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি হ’ল দুটি ভিন্ন কী দিয়ে ডেটা এনক্রিপ্ট বা স্বাক্ষর করার এবং একটি কী, সর্বজনীন কী, যে কেউ ব্যবহার করার জন্য উপলব্ধ করার একটি পদ্ধতি। অন্য কীটি প্রাইভেট কী নামে পরিচিত। পাবলিক কী দিয়ে এনক্রিপ্ট করা ডেটা শুধুমাত্র প্রাইভেট কী দিয়ে ডিক্রিপ্ট করা যায়।
ক্রিপ্টোগ্রাফি কিভাবে কাজ করে?
ক্রিপ্টোগ্রাফির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল একটি অননুমোদিত তৃতীয় পক্ষের পক্ষে দুটি পক্ষের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ অ্যাক্সেস এবং বুঝতে অসুবিধা করা। ডেটাতে সমস্ত অননুমোদিত অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করা সবসময় সম্ভব নয়, তবে এনক্রিপশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ডেটা অননুমোদিত পক্ষগুলির কাছে দুর্বোধ্য করা সম্ভব। এনক্রিপশন জটিল অ্যালগরিদম ব্যবহার করে মূল বার্তা (ক্লিয়ারটেক্সট) কে এনকোডেড মেসেজে (সাইফারটেক্সট) রূপান্তর করতে। এটা মূলত একটি ম্যাথমেটিকাল ফাংশন। এই এলগোরিদম কাজ করে একটি কী(Key)-এর সাথে। এই কী(Key) হতে আরে একটি শব্দ, সংখ্যা বা শব্দগুচ্ছ। একই প্লেইন টেক্সট বিভিন্ন Key-এর সাহায্যে বিভিন্ন সাইফার টেক্সটে রূপান্তরিত হবে। সিক্রেট-কী ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং পাবলিক-কী ক্রিপ্টোগ্রাফি উভয়ই একটি সম্মত ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী বা কীগুলির জোড়া ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। একটি কী হল বিটের একটি স্ট্রিং যা ডেটা এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করার প্রক্রিয়ার সময় ক্রিপ্টোগ্রাফিক অ্যালগরিদম বা অ্যালগরিদম দ্বারা ব্যবহৃত হয়। একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী একটি তালার চাবির মতো; শুধুমাত্র সঠিক চাবি দিয়ে আপনি তালা খুলতে পারেন। (চলবে)।
লেখকঃ সামিউল হক সুমন, নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ