ক্লাউড কম্পিউটিং কী?
ক্লাউড কম্পিউটিং হল একটি প্রযুক্তি যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার রিসোর্স, যেমন স্টোরেজ, ডেটাবেজ, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার, এবং অন্যান্য সেবা ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত আমরা যে ধরনের সার্ভার, স্টোরেজ বা নেটওয়ার্কিং যন্ত্রাংশগুলোকে নিজের হাতে ম্যানেজ করতাম, ক্লাউড কম্পিউটিং এই ধরনের রিসোর্সকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনি কোনও ওয়েবসাইট তৈরি করেন, সেটি হোস্ট করার জন্য নিজে সার্ভার সেটআপ না করে, আপনি ক্লাউড সেবা গ্রহণ করে সেখানে আপনার ওয়েবসাইটটি রাখতে পারেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং কীভাবে কাজ করে?
ক্লাউড কম্পিউটিং কাজ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভার এবং ডেটা সেন্টার ব্যবহার করে। যখন একজন ইউজার বা কোম্পানি ক্লাউড সেবা ব্যবহার করে, তখন তারা মূলত ভিন্ন স্থানে থাকা সার্ভারগুলির রিসোর্সগুলো ভাড়া নেয়। ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বিভিন্ন ধরণের সেবা অফার করে, যেমন:
IaaS (Infrastructure as a Service): ভার্চুয়াল মেশিন, নেটওয়ার্কিং, স্টোরেজ ইত্যাদি।
PaaS (Platform as a Service): ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ডেভেলপাররা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও ডিপ্লয় করতে পারে।
SaaS (Software as a Service): যেমন ইমেইল, CRM, এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন।
এই সেবাগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী স্কেল করা যায় এবং ইউজার কেবল ব্যবহার অনুযায়ী পেমেন্ট করে।
ধরা যাক, আপনার একটি ই-কমার্স সাইট আছে। আপনি এই সাইটের জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করতে পারেন। নিচে এই প্রকল্পে ক্লাউড কম্পিউটিং কিভাবে কাজ করবে তার একটি উদাহরণ দেওয়া হল:
ডেটা সংরক্ষণ: আপনার সাইটের সমস্ত ডেটা (যেমন পণ্য, ব্যবহারকারী তথ্য) একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসে সংরক্ষণ করা হবে, যেমন Amazon S3। এটি নিরাপদ এবং স্কেলেবল।
সার্ভার: আপনার সাইটটি একটি ভার্চুয়াল সার্ভারে হোস্ট করা হবে (যেমন AWS EC2)। এটি আপনার সাইটের ট্রাফিক অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কেল করতে পারে।
অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট: আপনার ডেভেলপাররা PaaS সেবা (যেমন Google App Engine) ব্যবহার করে দ্রুত এবং সহজে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারবেন।
নিরাপত্তা: ক্লাউড সেবা প্রদানকারীরা নিরাপত্তা এবং ডেটা ব্যাকআপের ব্যবস্থা করে, যা আপনাকে ডেটার সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে দেয় না।
ব্রাউজার ভিত্তিক অ্যাক্সেস: আপনার ব্যবহারকারীরা যে কোনো ডিভাইস থেকে ব্রাউজার ব্যবহার করে আপনার সাইটে প্রবেশ করতে পারবে, কারণ সাইটটি ক্লাউডে হোস্ট করা হয়েছে।
জনপ্রিয় ক্লাউড কম্পিউটিং প্রদানকারী ও তাদের বিস্তারিত বিবরণ:
Amazon Web Services (AWS): AWS বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী। এটি অনেক ধরণের ক্লাউড সেবা প্রদান করে, যেমন কম্পিউটিং, স্টোরেজ, ডাটাবেস, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি। উন্নত সিকিউরিটি, স্কেলেবিলিটি, এবং বহু পপুলার সার্ভিস প্রদান করে।
Microsoft Azure: Azure হল Microsoft এর ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম, যা ডেভেলপারদের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং পরিচালনা করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান প্রদান করে থাকে। Microsoft এর অন্যান্য প্রোডাক্ট যেমন Windows, Office 365 ইত্যাদির সাথে ইন্টিগ্রেশন সুবিধা প্রদান করে থাকে Microsoft Azure
Google Cloud Platform (GCP): GCP গুগলের ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি বিশেষত মেশিন লার্নিং এবং বিগ ডেটা প্রসেসিংয়ের জন্য জনপ্রিয়। এছাড়াও এতে রয়েছে উন্নত ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং এআই সেবা, গুগল সার্চের মতো স্কেলেবিলিটি।
AWS, Google Cloud (GCP), Microsoft Azure এর জনপ্রিয় কিছু সেবাঃ
AWS (Amazon Web Services)
- EC2 (Elastic Compute Cloud): AWS EC2 হলো একটি ভার্চুয়াল সার্ভার যা ক্লাউডে রান করতে পারে। এটি বিভিন্ন ধরনের instance (কম্পিউটিং রিসোর্স) প্রদান করে, যেগুলো ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য ব্যবহার করতে পারে।
- S3 (Simple Storage Service): S3 একটি অতি নির্ভরযোগ্য এবং স্কেলযোগ্য স্টোরেজ সেবা যা ডেটা স্টোরেজ এবং ব্যাকআপের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- RDS (Relational Database Service): AWS RDS একটি ম্যানেজড ডেটাবেস সার্ভিস যা জনপ্রিয় ডেটাবেস ইঞ্জিন যেমন MySQL, PostgreSQL, MariaDB ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Lambda: AWS Lambda একটি server less কম্পিউটিং সেবা যা ব্যবহারকারীদের তাদের কোড রান করাতে সাহায্য করে, কিন্তু এতে কোনো সার্ভারের প্রয়োজন হয় না।
GCP (Google Cloud Platform)
- Compute Engine: GCP Compute Engine হলো Google এর ভার্চুয়াল মেশিন সার্ভিস যা বিভিন্ন instance type প্রদান করে।
- Google Kubernetes Engine (GKE): GKE একটি ম্যানেজড Kubernetes সেবা যা কনটেইনারাইজড অ্যাপ্লিকেশন ডিপ্লয়মেন্ট এবং পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- BigQuery: BigQuery হলো Google এর একটি ফাস্ট এবং স্কেলেবল ডেটা অ্যানালিটিক্স সেবা, যা বড় ডেটাসেটের উপর রিয়েল টাইম বিশ্লেষণ করতে পারে।
- Cloud Storage: Google Cloud Storage হলো একটি highly scalable এবং durable স্টোরেজ সেবা যা ডেটা স্টোরেজ এবং ব্যাকআপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
Microsoft Azure
- Virtual Machines (VM): Azure Virtual Machines হলো মাইক্রোসফটের ক্লাউডে চলা ভার্চুয়াল সার্ভার যা বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন করে।
- Azure App Service: Azure App Service হলো একটি PaaS (Platform as a Service) সেবা যা ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- Azure SQL Database: Azure SQL Database হলো একটি ম্যানেজড রিলেশনাল ডেটাবেস সার্ভিস যা SQL সার্ভারের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
- Azure Functions: Azure Functions হলো serverless computing সেবা যা ছোট ছোট কোড ফাংশন চালানোর সুযোগ দেয়।
তুলনা:
AWS সবচেয়ে বেশি সার্ভিস প্রদান করে এবং দীর্ঘদিন ধরে বাজারে প্রভাবশালী অবস্থানে আছে।
Google Cloud ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং মেশিন লার্নিংয়ের জন্য বেশি পরিচিত।
Azure বিশেষ করে এন্টারপ্রাইজ লেভেলের মাইক্রোসফট টেকনোলজি ইকোসিস্টেমের সাথে ভালোভাবে ইন্টিগ্রেটেড।
কোন ক্লাউড প্রদানকারী বেশি ভালো?
এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার প্রয়োজনের ওপর। যদি আপনি খুব বড় স্কেলে ডাটা প্রসেসিং এবং স্টোরেজ নিয়ে কাজ করেন, তাহলে AWS বা GCP আপনার জন্য ভালো হতে পারে। যদি আপনার প্রয়োজন Microsoft এর সাথে ঘনিষ্ঠ ইন্টিগ্রেশন, তাহলে Azure ভাল অপশন হতে পারে।
এই সার্ভিসগুলো ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। যেমন, কেউ যদি মাইক্রোসফট ইকোসিস্টেমে বেশি অভ্যস্ত হয় তবে Azure ভালো অপশন হতে পারে, আর যদি আপনার ডাটা অ্যানালিটিক্স প্রয়োজন বেশি হয় তবে Google Cloud ব্যবহার করা উচিত। AWS সব ধরনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটি ফ্লেক্সিবল এবং জনপ্রিয় অপশন।
মূল লেখকঃ Mozahidul Islam Nahid, DevOps Engineer (https://www.linkedin.com/in/nahid7846/)