টেকসিঁড়ি টিউটোরিয়ালঃ ডেটা সেন্টার টায়ার হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা ডেটা সেন্টারগুলোর রিডানডেন্সি (redundancy) এবং ফল্ট টলারেন্স (fault tolerance) এর উপর ভিত্তি করে তাদের অবকাঠামো এবং কর্মক্ষমতাকে মুল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়। আপটাইম ইনস্টিটিউটের (Uptime Institute) স্ট্যান্ডার্ড চারটি টায়ার (১-৪) নির্ধারণ করে, যেখানে অবকাঠামো এবং রিডানডেন্সির দিক থেকে প্রতিটি টায়ার তার পূর্ববর্তী টায়ারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। উচ্চতর টায়ারগুলো বেশি আপটাইম এবং প্রাপ্যতা (availability) নিশ্চিত করে, তবে সেগুলোর খরচও বেশি হয়।”
এই লেভেলগুলো ডেটা সেন্টারের নকশা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কুলিং সিস্টেম (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা), এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বিস্তারিত লিখেছেন নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সামিউল হক সুমন।
টায়ার ১ ডেটা সেন্টার: যেসব গ্রাহক টায়ার ১ ডেটা সেন্টার ব্যবহার করেন, তারা সাধারণত তাদের পণ্য বা পরিষেবা রিয়েল-টাইম ডেলিভারির উপর নির্ভরশীল নন। যেসব কোম্পানির ডেটা সংরক্ষণের জন্য তাদের অফিসে সার্ভার ইনস্টল করার বাইরেও একটি ডেডিকেটেড অবকাঠামো সমাধানের প্রয়োজন, তারা টায়ার ১ স্তরের ডেটা সেন্টার ব্যবহার করতে পারে। এই স্তরে দুর্যোগ সুরক্ষার মাত্রা সবচেয়ে কম থাকে।
বৈশিষ্ট্য: বিদ্যুৎ এবং কুলিং এর জন্য একটি মাত্র পথ (Single Path) থাকে। কোনো অতিরিক্ত বা রিডানডেন্ট (Redundant) অবকাঠামো থাকে না। সার্ভার বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের জন্য পুরো সিস্টেম বন্ধ (Shutdown) করার প্রয়োজন হয়।
আপটাইম: ৯৯.৬৭১%। এর অর্থ, বছরে সর্বোচ্চ ২৮.৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ডাউনটাইম (পরিষেবা বন্ধ) থাকতে পারে।
কাদের জন্য উপযোগী: ছোট ব্যবসা বা স্টার্টআপ, যাদের জন্য সাময়িক ডাউনটাইম বড় কোনো ব্যবসায়িক ক্ষতি করবে না, তারা এই টায়ারের ডেটা সেন্টার ব্যবহার করতে পারে।
টায়ার ২ ডেটা সেন্টারঃ যেসব কোম্পানির ডাউনটাইম ছাড়াই তাদের ডেটাতে অ্যাক্সেসের প্রয়োজন, তারা টায়ার ২ স্তরের ডেটা সেন্টার ব্যবহার করতে পারে। এর অবকাঠামোতে টায়ার ১-এর সক্ষমতার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও শীতলীকরণের জন্য অতিরিক্ত উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে, যার মধ্যে ব্যাকআপ ইউপিএস ব্যাটারি সিস্টেম, চিলার, জেনারেটর এবং পাম্প থাকতে পারে। এটি গ্রাহকদের যেকোনো বিভ্রাটের বিরুদ্ধে আরও বেশি নির্ভরযোগ্যতা প্রদান করে।
বৈশিষ্ট্য: বিদ্যুৎ এবং কুলিং এর জন্য একটি মাত্র পথ থাকলেও কিছু অতিরিক্ত বা রিডানডেন্ট কম্পোনেন্ট (যেমন- অতিরিক্ত জেনারেটর, ইউপিএস) থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিস্টেম বন্ধ করার প্রয়োজন হয়।
আপটাইম: ৯৯.৭৪১%। বছরে সর্বোচ্চ ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত ডাউনটাইম হতে পারে।
কাদের জন্য উপযোগী: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা (SMBs) যাদের জন্য আপটাইম কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তারা উচ্চ খরচের টায়ার ৩ বা ৪ এর জন্য প্রস্তুত নয়।

টায়ার ৩ ডেটা সেন্টারঃ যেসব কোম্পানির জন্য তাদের পণ্য বা পরিষেবার রিয়েল-টাইম ডেলিভারি তাদের কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন নেটফ্লিক্সের মতো মিডিয়া সরবরাহকারী, ফেসবুকের মতো কন্টেন্ট সরবরাহকারী, আর্থিক সংস্থা, বাণিজ্য বা স্বাস্থ্যসেবা শিল্প, তারা টায়ার ৩ স্তরের ডেটা সেন্টার প্রদানকারী ব্যবহার করবে।
বৈশিষ্ট্য: বিদ্যুৎ, কুলিং এবং নেটওয়ার্কিং-এর জন্য একাধিক পথ (Multiple Paths) থাকে।
N+1 রিডানডেন্সি থাকে। এর মানে হলো, সিস্টেম চালু রাখার জন্য যতগুলো কম্পোনেন্ট প্রয়োজন, তার সাথে অন্তত একটি অতিরিক্ত কম্পোনেন্ট প্রস্তুত থাকে। যেকোনো যন্ত্রাংশ মেরামত বা পরিবর্তনের জন্য পুরো সিস্টেম বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ, কোনো ডাউনটাইম ছাড়াই রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব।
আপটাইম: ৯৯.৯৮২%। বছরে সর্বোচ্চ ১.৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ডাউনটাইম হতে পারে।
কাদের জন্য উপযোগী: বড় ব্যবসা, ই-কমার্স সাইট, ব্যাংক, এবং যেসকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্বক্ষণিক অনলাইন থাকা জরুরি, তাদের জন্য টায়ার ৩ ডেটা সেন্টার আদর্শ। বাংলাদেশে জাতীয় ডেটা সেন্টারসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ডেটা সেন্টার টায়ার ৩ সনদপ্রাপ্ত।
টায়ার ৪ ডেটা সেন্টার: এর মধ্যে টায়ার ১, টায়ার ২ এবং টায়ার ৩-এর সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং ফল্ট টলারেন্সের আরেকটি স্তর যুক্ত করে। বিদ্যুৎ, কুলিং এবং স্টোরেজ সবই আলাদাভাবে ডুয়াল-পাওয়ারযুক্ত। অবকাঠামোর টপোগ্রাফি সিস্টেমে যেকোনো জায়গায় একটি ফল্ট হলেও পরিষেবাতে কোনো ব্যাঘাত ঘটতে দেয় না এবং সবচেয়ে কম ডাউনটাইম নিশ্চিত করে। যেসব এন্টারপ্রাইজের জন্য ২৪/৭ সক্রিয় থাকা আবশ্যক, তাদের জন্য একটি টায়ার ৪ ডেটা সেন্টার আদর্শ।
বৈশিষ্ট্য:সম্পূর্ণ ফল্ট টলারেন্ট একটি সিস্টেম। এর মানে হলো, যেকোনো একটি যন্ত্রাংশ বা বিদ্যুৎ সরবরাহের পথ বিকল হলেও ডেটা সেন্টারের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়ে না। অবকাঠামোর প্রতিটি অংশ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং বিচ্ছিন্ন থাকে। 2N বা 2N+1 রিডানডেন্সি থাকে। অর্থাৎ, প্রতিটি সিস্টেমের জন্য একটি সম্পূর্ণ ডুপ্লিকেট বা আয়নার মতো সিস্টেম প্রস্তুত থাকে। পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত যেকোনো বিভ্রাটের সময়ও এটি নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করে।
আপটাইম: ৯৯.৯৯৫%। বছরে সর্বোচ্চ ২৬.৩ মিনিট পর্যন্ত ডাউনটাইম হতে পারে।
কাদের জন্য উপযোগী: আন্তর্জাতিকমানের বড় কর্পোরেশন, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, এবং যেসকল ব্যবসার জন্য এক মুহূর্তের ডাউনটাইমও গ্রহণযোগ্য নয় (যেমন- আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে, বড় আকারের ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী), তাদের জন্য টায়ার ৪ ডেটা সেন্টার অপরিহার্য। আনন্দের বিষয় হলো, বাংলাদেশেও টায়ার ৪ সনদপ্রাপ্ত জাতীয় ডেটা সেন্টার রয়েছে।
শেষ কথা
সঠিক টায়ার লেভেলের ডেটা সেন্টার নির্বাচন করা আপনার ব্যবসার ধরনের, বাজেটের এবং তথ্যের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে। আপনার ব্যবসার জন্য যদি সার্বক্ষণিক অনলাইন উপস্থিতি এবং তথ্যের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়, তবে টায়ার ৩ বা টায়ার ৪ ডেটা সেন্টার বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যদিকে, ছোট বা নতুন ব্যবসার জন্য টায়ার ১ বা ২ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। আপনার প্রয়োজন বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণই ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদী সফলতায় সহায়ক হবে।