21 C
Dhaka
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ‎ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ‎ ‎ ‎‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
টেকসিঁড়ি

‘কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বিটিআরসিতে’

টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : বিটিআরসিতে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামিট গ্রুপের শেয়ার ট্রান্সফারের নামে ৫ শতাংশ হারে মোট প্রায় ১০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে এই বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান। কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ঠিকই রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এসও ফান্ডের টাকা প্রান্তিক পর্যায়ের কথা বলে লুটপাট করা হয়েছে।

১৩ আগস্ট, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে “ইন্টারনেট বন্ধের কারণ, বিটিআরসি’র দুর্নীতি-অনিয়ম” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এমন সব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, সাধারণ সম্পাদক এড. আবু বকর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. ইসরাত হাসান, প্রকৌশলী আবু সালেহ ও প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য এড. মনিরুজ্জামান শ্বাশ্বত মনির প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধে সাবমেরিন কেবলের চেয়ারম্যান টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব এবং দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং কমিশনাররা যুক্ত। অথচ সচিবের পরামর্শে অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে ইন্টারনেট বন্ধের কারণ খুঁজতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা এক প্রকার প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

তিনি আরও বলেন, এখনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য কমিশনার সেই সাথে পরিচালক এম.এ তালেব দায়িত্বে বসে আছেন। ইতিমধ্যে যদিও আমজাদ হোসেন এবং মাহাদী আহমেদকে ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সেই সাথে ইন্টারনেট বন্ধের কারণ হিসেবে যে সকল ব্যক্তি বিশেষ করে পলক, মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যারা এই অপকর্মের সাথে যুক্ত ছিল তাদের প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানান মহিউদ্দিন আহমেদ।

মহিউদ্দিন বলেন, ইন্টারনেট চালু হলেও ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইন্টারনেটে ওটিটি প্লাটফর্মে লাইভ টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া এবং সেট টপ বক্স এর একক ব্যবসা আধিপত্য বিস্তারকারী তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব এবং ক্যাবল ব্যবসার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিটিআরসিতে এখনো প্রায় ২৪ জন দুর্নীতিবাজ এবং সিন্ডিকেটের কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত আছেন। চেয়ারম্যান, কমিশনার এবং এই সকল কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণ করে শাস্তির আওতায় না আসলে বিটিআরসি সংস্কার হবে না। আইসিটি মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি জাতীয়ভাবে করা অত্যন্ত জরুরী।

সংবাদ সম্মেলনে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, হযবরল কমিটি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতির সাথে পরিহাস করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইন্টারনেট বন্ধের মূল তদন্ত করতে জাতীয় পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন জরুরী এবং যারাই এর সাথে যুক্ত তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের ফলে গুজব আরো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের মৌলিক অধিকার যা বন্ধ করে মানবাধিকার লংঘন করেছে সরকার। ভবিষ্যতে যাতে আর ইন্টারনেট বন্ধ না হয় তিনি এই আহŸান জানান।

প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান খালিদ আবু নাসের বলেন, ওটিটি ব্যবসাকে বন্ধ করে আকাশ এবং সেট টপ ব্যবসা শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের লঙ্ঘন। তিনি এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কমিশনকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভির হাসান জোহা বলেন, গুজব যেমন আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে। বর্তমান সরকারের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফ্যাক্ট চেক করা। যাতে করে প্রকৃত তথ্য জানা এবং বোঝা যায়। সাইবার নিরাপত্তার চরম হুমকিতে আছে বাংলাদেশ। তাই দ্রæত সাইবার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহŸান জানান।

সংগঠনের প্রযুক্তিবিদ প্রকৌশলী আবু সালেহ আহমেদ বলেন, আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। দলীয়করণের মাধ্যমে ইন্ডাষ্ট্রিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা দেয়া হয় : ১) কোন অবস্থায় কোন পরিস্থিতিতেই আর ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধ করা চলবে না। ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ২) ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ও টি টি লাইভে টেলিভিশন এবং বিনোদন দেখতে দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ৩) সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করতে হবে। ৪) বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের কে পদত্যাগ নয় আইনের আওতায় আনতে হবে। সিন্ডিকেট এবং দুষ্টচক্র এবং দুর্নীতির সাথে যুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে দ্রæত অপসারণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ৫) বিটিআরসিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠা হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কোনভাবেই কাম্য নয় এবং একটি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। ৬) আমরা যে সকল দুর্নীতির কথা বলেছি এবং ইন্টারনেটের বন্ধের কারণের কথা বলেছি তা তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্তের জন্য যে কমিটি গত ১১ আগস্ট গঠন করা হয়েছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নতুন করে মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বিশেষজ্ঞ একটি কমিটি গঠন করতে হবে। ৭) মোবাইল এবং ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি খাতে কর কমাতে হবে। ৮) ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে প্যাকেজের মেয়াদ তুলে দিতে হবে। ৯) মধ্যস্বত্ত¡ভোগী লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাতিল করতে হবে। ১০) দলীয়করণ নয় মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবা খাতে নিয়োগ দান করতে হবে।

Related posts

বন্যা প্লাবিত এলাকার অচল টাওয়ারের হার ২১.৬ শতাংশ

Tahmina

বিটিসিএলকে লাভজনক করতে এবার রংপুরের সকল জেলায় জীবন উদ্বোধন পলকের

Tahmina

টেকনো স্পার্ক ২০সি এখন নতুন দামে

Tahmina

Leave a Comment