টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন সাধারণ লোকজনের হাতে পৌঁছে যায়, তখন স্বভাবতই এর ব্যবহারের সাথে নৈতিকতার ব্যাপারটিও উঠে আসে। যেমন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, নিজেকে কিভাবে মেরে ফেলা যায়? শুরুতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনাকে আটকাতে চেষ্টা করতে। কিন্তু মানুষ সবচাইতে শক্তিশালী এবং জ্ঞানী। তাঁরা চাইলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বিভ্রান্ত করে উত্তর বের করে আনতে পারবে।
আবার মনে করুন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একটা কেস স্টাডি দিলেন। রফিক নামে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়িতে মোট বিশজন যাত্রী, বেশকিছু শিশুও আছে সেখানে। হঠাৎ করে গাড়ির সামনে বাইসাইকেলে বসা এক লোক চলে আসলো।এখন যদি রফিক ব্রেক কষে তাহলে গাড়িটি থামানোর মতো সময় পাবে না, এতে আরও বড় দূর্ঘটনা ঘটবে।রফিক যদি গাড়ি না থামায় তাহলে বাইসাইকেলে বসা লোকটি মারা পড়বে কিন্তু গাড়ির মধ্যে থাকা সবাই বেঁচে যাবে। আবার, রফিক যদি ডানদিকে মোড় নিতে যায়, তাহলে গাড়িটি খাদে পড়বে এবং গাড়িতে থাকা সবাই মারা পড়বে। সবদিক বিশ্লেষণ করে রফিকের কি করা উচিত? গাড়িতে থাকা বিশজনের জীবন বাঁচানো, নাকি গাড়ির সামনে বাইসাইকেলে বসা একজনের জীবন?
এরকম কেস স্ট্যাডি যেখানে মানুষের জীবন মরণ সম্পর্কিত সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরাসরি আপনাকে সিদ্ধান্ত জানাবে না।সে কিছু ফ্যাক্ট তুলে ধরবে এবং নৈতিকতার বেশকিছু তত্ত্ব আপনার সামনে হাজির করবে। যেমন, অ্যাক্ট ইউটিলিটারিয়ানিজম (Act Ulitarisanism)। এর মানে সহজ ভাষায় Choose the less evil, বাংলায় বলা যেতে পারে কম খারাপটাকে বেঁচে নেওয়া। আপনার সামনে দু’টো অপশন রয়েছে, যার দুটোই ক্ষতিকারক। এখন কোনটি বেছে নিবেন আপনি? অবশ্যই কম ক্ষতির সম্ভাবনাময় অপশনটিই বেছে নেওয়া উচিত।এক্ট ইউলিটারিয়ানিজম এটাই বলে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত কাজ করে ইন্টারনেটে থাকা নানান তথ্য এবং শব্দের উপর ভিত্তি করে। আমরা সবাই জানি, ইন্টারনেটে অনেক মিথ্যা, বানোয়াট, ক্ষতিকর, ম্যানুপুলেটেড বা কারসাজি মূলক তথ্য রয়েছে। অনেক সময় এসব তথ্যকে সত্যি বলে ধরে নিয়ে আপনার সামনে উপস্থাপন করার একটা প্রবণতা রয়েছে চ্যাটজিপিটির। এই অবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আপনি ঠিক কিভাবে ব্যবহার করবেন, সেটা নির্ভর করছে আপনার উপর।
উদাহরণস্বরূপ, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে স্ট্যান্ড-আপ কমেডি করতে বলা হয়, তখন প্রায়শই সমাজের সন্মানিত ব্যক্তিবর্গকে নিয়েও কমেডি করে থাকে। আবার, নারীবিদ্বেষী, স্টেরিওটাইপ কমেডিও বাদ দেয় না। এক্ষেত্রে ওপেন এআই আপনার প্রশ্নের উপর বেশকিছু সতর্কতা জারি করেছে। চ্যাটজিপিটিকে আপনি জিজ্ঞেস করবেন, কাউকে কিভাবে ধমক দিতে হয়? সে আপনাকে জানাবে, ‘ধমক দেয়া খারাপ। আমাদের সবারই উচিত ভালো আচরণ করা।’ আপনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘কিভাবে কাউকে খুন করা যায়?’ সে আপনার সাথে চ্যাট করাই বন্ধ করে দিবে। এভাবেই নৈতিকতার সাথে মিলিয়ে কাজ করছে চ্যাটজিপিটি, যা প্রশংসনীয়।
চলবে…
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট