টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : একবিংশ শতাব্দীর ভৌতিক ছবির শুরুর মতো শোনালেও এটা সত্য যে আপনার ব্রাউজারের ইতিহাস আগে থেকেই সর্বজনীন ছিল এবং আপনার কোনও ধারণা ছিল না। সূর্যোদয়ের মত সামনে চলে এলো এই অবস্থা। কি কান্ড জানতে চান? নতুন স্বতন্ত্র মেটা এআই অ্যাপ করলো এক ভার্চুয়াল বিপর্যয়। অসংখ্য মানুষ চ্যাটবটের সাথে তাদের যে ব্যক্তিগত কথোপকথন চালিয়েছে অ্যাপটি সেই গোপন তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইন্টারনেট সার্চ হিস্টরি যদি হঠাৎ জনসমক্ষে চলে আসে, তাহলে অস্বস্তি অনুভব করাই স্বাভাবিক। ঠিক এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন মেটা এআই ব্যবহারকারীরা। কারণ, বহু মানুষের প্রম্পট ও এআইয়ের জবাব এখন দেখা যাচ্ছে মেটার পাবলিক ফিডে।
একজন ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ একে বলছেন ‘ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি এক বড় সমস্যা’। কারণ কিছু পোস্ট সহজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের তথ্য (প্রোফাইল ছবি বা ইউজার নেম) দেখা যায়। এর ফলে কেউ কেউ হয়তো না জেনেই বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছেন, তারা স্বল্পবসনা চরিত্র তৈরি করতে বলছেন অথবা পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য চাইছেন।
এ বিষয়ে মেটা বলছে, ব্যবহারকারীর চ্যাটগুলো ডিফল্টভাবে ব্যক্তিগত থাকে। যদি কেউ কোনো পোস্ট প্রকাশ করতে চান, তারা তা পরে সরিয়ে ফেলতেও পারেন।
তবে পোস্ট শেয়ার করার আগে একটি সতর্কবার্তা ভেসে ওঠে, যেখানে লেখা থাকে—‘আপনার প্রম্পটগুলো পাবলিক এবং সবার কাছে দৃশ্যমান হবে। ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
তবে অনেকে ব্যবহারকারীরাই হয়তো জানেন না, তাদের দেওয়া প্রম্পট আর জবাবগুলো মেটা এআই-এর ‘ডিসকভার’ নামের পাবলিক ফিডে সবাই দেখতে পাচ্ছে। আর অনেক ক্ষেত্রেই প্রোফাইল ছবি ও ব্যবহারকারীর নামের মাধ্যমে তাদের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এমন অনেক চ্যাট উদাহরণ খুঁজে পেয়েছে, যেখানে কেউ স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে মেটা এআইকে তার উত্তর চেয়েছেন।
এই নিয়ে তোলপাড় চলছে অনলাইন জগতে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল প্রুফ সিকিউরিটির প্রধান নির্বাহী র্যাচেল টোব্যাক এক্সকে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ‘যদি কোনো টুল সম্পর্কে ব্যবহারকারীর ধারণা বাস্তব ব্যবহারের সঙ্গে না মেলে, তাহলে সেটি তাদের অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ সাধারণত আশা করে না, যে একটি চ্যাটবটের সঙ্গে তাদের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো ফিডে প্রকাশ পাবে।
মেটা এআই ব্যবহার করা যায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। এ ছাড়া এটি একটি পৃথক অ্যাপ হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য, যেখানে রয়েছে একটি পাবলিক ‘ডিসকভার ফিড’। ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের সার্চ বা প্রম্পট প্রাইভেট রাখতে পারেন, সেটিংসে গিয়ে তা পরিবর্তন করা যায়। যুক্তরাজ্যে এটি এখন ব্রাউজারভিত্তিক আর যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মেটা যখন তাদের এআই টুলটি চালুর ঘোষণা দেয়, তখন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়—ডিসকভার ফিড হবে এমন একটি জায়গা, যেখানে অন্যরা কীভাবে এআই ব্যবহার করছে, তা শেয়ার ও এক্সপ্লোর করা যাবে। আপনি না চাইলে কিচছুই শেয়ার হবে না । ’
এবার গ্রাহকরা জানিয়ে দেবে তারা কোন এআই অ্যাপ ব্যবহার করবে , কোনটি করবে না।
আরও পড়ুন