টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : বর্তমানে সাইবার স্পেসে যে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপকতা প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে মিথ্যা তথ্য দেশের সামাজিক সৌহার্দ্য নষ্ট করে তাই এ বিষয়টিকে ছোট করে দেখা বা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ। ভুল তথ্য এবং মিথ্যা তথ্য চেক করতে আমাদের লাগবে ফ্যাক্টস এন্ড ফিগার। এই ফ্যাক্টস এন্ড ফিগার অথেনটিক কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২ দিনব্যাপী ডিজিটাল ভেরিফিকেশন এন্ড ফ্যাক্ট চেকিং প্রশিক্ষণ শেষে বুধবার, ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই কথা বলেন।
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে প্রশিক্ষণের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রধান অতিথি হিসেবে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রচুর অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাইবার যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে। এখন ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য এবং সাইবার যুদ্ধ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
সমাপনী বক্তব্যে সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যা সরকারের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জনসংযোগ কর্মকর্তারা যদি তথ্য যাচাইয়ের দক্ষতা অর্জন করেন তাহলে তারা সরকারের প্রকৃত বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছতে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।
প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত উপপ্রধান তথ্য অফিসার এ. কে. এম. কামরুল আহছান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রশিক্ষণ খুবই সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রশিক্ষণের ফলে জনসংযোগ কর্মকর্তাগণের দক্ষতা আরও শাণিত হবে। আমরা প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে দেশ, সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে অপতথ্য, অপপ্রচার কার্যকরভাবে খন্ডন করতে সক্ষম হবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপপ্রধান তথ্য অফিসার) মোঃ ফয়সল হাসান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াসহ মূল ধারার বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে যেমন তথ্যের অবাধ প্রবাহ ঘটছে, তেমনি বিভিন্নভাবে ভুল তথ্য, অপতথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে তা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই হোক না কেন। সেজন্য জনগণের নিকট সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে যেকোন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতকরণ বা ফ্যাক্ট চেকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য বিভিন্ন অনলাইন / ডিজিটাল ট্যুল (সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট) সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিভাবে ফ্যাক্ট চেকিং করতে হয়, হাতেকলমে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেছি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপপ্রধান তথ্য অফিসার) দীপংকর বর বলেন, প্রশিক্ষণে ডিজিটাল কনটেন্ট যাচাই, ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স টুলস ব্যবহারের পদ্ধতি এবং ডিজইনফরমেশন মোকাবিলার বাস্তব কৌশল শেখানো হয়। ভবিষ্যতে ডিপফেক শনাক্তকরণ, এআই কনটেন্ট চিহ্নিতকরণসহ আরও সময়োপযোগী মডিউল ও নিয়মিত রিফ্রেশার কোর্স চালু করা হলে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা আরও বাড়বে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (সি.তথ্য অফিসার ) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, এই প্রশিক্ষণ অপতথ্য, ভুল তথ্য ও গুজব প্রতিরোধ ও শনাক্ত করতে ভূমিকা রাখবে। যে টুলসগুলো ব্যবহার করে মিস ইনফরমেশন ও ডিস ইনফরমেশন চেক করা যায়, সেই টুলস গুলো রিসোর্স পার্সনগণ তুলে ধরেছেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রচার কার্যক্রমের সাথে জড়িত জনসংযোগ কর্মকর্তাদের জন্য আইসিটি ডিভিশন কর্তৃক আয়োজিত ডিজিটাল ভেরিফিকেশন এবং ফ্যাক্ট চেকিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা গুজব, মিস ইনফরমেশন, ভুল তথ্য বা প্রোপাগান্ডা দ্রুত শনাক্ত করে ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়ানো ফেক সংবাদ চিহ্নিত করার কৌশল সম্পের্ক জেনেছি। ডিজিটাল সোর্স ক্রস-চেকিং, ডেটা অ্যানালাইসিস এবং প্রাইমারি সোর্স শনাক্ত করার দক্ষতা অর্জন করেছি। এছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে শেয়ার করতে হবে বা কোন লিঙ্কে ক্লিক করা নিরাপদ—তা বুঝতে পেরেছি। – FactCheck.org, Snopes, AFP Fact Check-এর মতো টুলস ব্যবহার করে সঠিক সংবাদ বের করার কৌশল শিখেছি।
প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন কদরুদ্দিন শিশির যিনি বাংলাদেশের লিডিং ফ্যাক্টচেকার ও মিডিয়া প্রফেশনাল। এর আগে তিনি এএফপি ফ্যাক্টচেক বাংলার সাবেক এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও ছিলেন মিনহাজ আমান যিনি একজন ডিসইনফরমেশন রিসার্চার এবং ট্রেইনার। লিড রিসার্চার হিসাবে কাজ করছেন ডিসমিস ল্যাব নামে একটি মিডিয়া রিসার্চ সংস্থায়৷ প্রশিক্ষণটি ফ্যাসিলেট করেছে মারুফ আহমেদ, যিনি একজন ইনফরমেশন ইন্টেগ্রিটি রিসার্চার।
উল্লেখ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এর নির্দেশনায় প্রথম বারের মতো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিয়ে এ ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।