টেকসিঁড়ি ফিচারঃ গুগল পে আর বিকাশ—দুটোই ডিজিটাল পেমেন্টের অ্যাপ, কিন্তু বাংলাদেশের মতো ক্যাশ-নির্ভর মার্কেটে এদের সুবিধা-অসুবিধা একেবারেই আলাদা।
বিকাশ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে যে বিকল্প ভাবতেই কষ্ট হয়। কিন্তু জানেন কি শুধু লেনদেনের ফি নিয়েই বিকাশ বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা!
হিসাবটা দেখুন: ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিকাশের মাসিক লেনদেন ছিল গড়ে ১.২ বিলিয়ন ডলার। প্রতি লেনদেনে গড়ে ১.৫% ফি ধরলেও শুধু ফি থেকেই তাদের মাসিক আয় দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তাহলে বছরে আসতেসে ২,৪০০ কোটি টাকারও বেশি ! এজেন্ট কমিশন, মার্চেন্ট সার্ভিস চার্জ—এগুলো আলাদা। এই টাকা কিন্তু আপনার-আমার পকেট থেকেই যাচ্ছে। প্রতিবার ক্যাশ আউটে ১০-২০ টাকা, টাকা পাঠালে ৫-১৯ টাকা—জমা হচ্ছে বিশাল মুনাফা।
এখানেই গুগল পে-র সম্ভাবনা যা আমাদের জন্য আকর্ষণীয়। ভাবুন, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হন, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের পাঠানো টাকা বিকাশে আনতে ৭-১৫% ফি কাটা পড়ে। গুগল পে সরাসরি বৈশ্বিক লেনদেন সাপোর্ট করলে (বাংলাদেশে ফুল অপারেশন চালু হলে) সেই ফি কমে যেতে পারে ১-৩%। রেমিট্যান্স, ইউটিউব আয়, ফ্রিল্যান্স ইনকাম—সব কিছুতেই সাশ্রয় হবে কোটি কোটি টাকা।
আর পিয়ার-টু-পিয়ার ট্রান্সফার এর ব্যাপারে গুগল পে সাধারণত জিরো ফি নেয় (ব্যাংক চার্জ আলাদা)। বিকাশে যেখানে ১০০০ টাকা পাঠাতে খরচ হয় ১৯ টাকা, সেখানে গুগল পেতে খরচ হতে পারে মাত্র ২-৫ টাকা! অনলাইন শপিং, গুগল প্লে, ইউটিউব প্রিমিয়াম—বিশ্বস্তভাবে পেমেন্ট করা যাবে এক ক্লিকেই। নিরাপত্তাও বাড়বে—গুগলের এনক্রিপশন আর ফ্রড ডিটেকশন সিস্টেম অনেক এগিয়ে।
তবে সতর্কও থাকতে হবে। গুগল পে-র সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো এর ক্যাশ-ইন/আউট নেটওয়ার্ক। বিকাশের ৩ লাখ এজেন্ট পয়েন্টে যেমন সহজে টাকা ওঠানামা করা যায়, গুগল পে সেটা দেবে কি না সন্দেহ। গ্রাম-গঞ্জের আনব্যাঙ্কড মানুষজনের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া, ইউটিলিটি বিল, এজেন্ট-ভিত্তিক লোন, মোবাইল রিচার্জের মতো স্থানীয় সার্ভিস গুগল পে কতটা দ্রুত দেবে ? বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেশন আর স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ইন্টিগ্রেশনও জটিল বিষয়।
শুধু ফি বাঁচানোর জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য বিকাশ এখন একচেটিয়া। গুগল পে এলে ফি কমবে, সার্ভিসের মান বাড়বে, ইনোভেশন আসবে। শহুরে শিক্ষিত যুবক, ফ্রিল্যান্সার, অনলাইন শপাররা প্রথমে উপকৃত হবেন। আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ হবে, ডিজিটাল ইকোনমি গতি পাবে। তবে বিকাশের বিকল্প হবার চেয়ে পরিপূরক হতেই পারে গুগল পে—যারা ক্যাশ লেনদেন চান তাদের জন্য বিকাশ, আর ডিজিটাল/অনলাইন ইউজারদের জন্য গুগল পে।
বিকাশ দেশে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের রূপকার, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ফি এর বোঝা ক্রমেই অসহ্য হচ্ছে। গুগল পে চালু হলে তা জোরালো প্রতিযোগিতা তৈরি করে ভোক্তা-সুরক্ষা বাড়াতে পারে। তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে স্থানীয় সমস্যার সমাধান, রেগুলেটরি সহযোগিতা এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেটের প্রাপ্যতার ওপর।
— তথ্যসূত্র: – বিকাশের ফি কাঠামো: বিকাশ অ্যাপ (সরাসরি যাচাইকৃত) – লেনদেন ভলিউম: বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের এমএফএস রিপোর্ট – গুগল পে ফি মডেল: গুগল পে গ্লোবাল পলিসি ডকুমেন্টস – ডিজিটাল ইনক্লুশন ডেটা: বিশ্বব্যাংক, বিআইএস রিপোর্টস
মূল লেখকঃ ইব্রাহিম এলিন, এসিস্টেন্ট ফিল্ম ডিরেক্টর, এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর, কোক স্টুডিও বাংলা