তথ্যপ্রযুক্তিতে মেয়েরা পিছিয়ে কেন? মেল ডমিনেট সেকটরে মেয়েরা নিজের রোল প্লে কেন করতে পারে না ? গ্রো করবার জন্য নিজেকে কিভাবে তৈরি করবে ? পার্সোনাল লাইফ এন্ড প্রফেশনাল লাইফ কি একাকার! এমনসব সময়োপযোগী প্রশ্ন, গল্প , জীবন ঘনিষ্ঠ ঘটনা নিয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বনামধন্য সকল নারীকর্মীরা।
১১ অক্টোবর , শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে চেক ইনক এর বাংলাদেশ অফিসে আয়োজিত হয়েছে প্রযুক্তিতে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অগ্রযাত্রার গল্প নিয়ে এক বিশেষ আয়োজন। আলোকিত শত মুখের উপস্থিতিতে ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিভাবান নারীরা অংশ নেন দিনব্যাপি এই আয়োজনে।
সুন্নত ৬২৯ ল্যাবস এবং টেক সিস্টারস কমিউনিটি পরিচালিত এই ইভেন্টে অনলাইন মিডিয়া পার্টনার ছিল টেকসিঁড়ি ডট কম। অনুষ্ঠানটি সকাল ৯ টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫ টায় সম্পন্ন হয় ।

তসলিমা বিনতা হাফিজ, রাইজআপ ল্যাবসের পিপল অ্যান্ড কালচার বিভাগের প্রধান প্রথমেই বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রতিটি মেয়েকে গ্রো করবার জন্য কিভাবে তৈরি করতে হবে তা উপস্থাপন করেন। গল্পের ছলে নানা রকম উদাহরণ দিয়ে সেশন আনন্দঘন করে উপস্থাপন করেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষ দুই প্রকার , এক টেক পিপল আর আরেক নন টেক পিপল। তিনি মেয়েদের সহনশীলতা বাড়িয়ে সিংহীর মত শক্ত হয়ে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেন।
তারপর গল্প করতে আসেন সাজিয়া রোমানা মৌ , তিনি সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইঞ্জিনিয়ার, ডায়নামিক সলিউশন ইনোভেটরস লিমিটেডে কাজ করছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রযুক্তিতে মেয়েরা কেন পিছিয়ে ? মেল ডমিনেট সেক্টরে মেয়েদের উচিত নিজের রোল প্লে করে যাওয়া । ক্যারিয়ারের জন্য রোল সুইচ করাটা খুব ভাল বলে তিনি মনে করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন।
নাজিয়া ইসলাম – এআই ফার্স্ট প্রোগ্রাম হেড, গ্রামীণফোন, পড়াশুনা করতে গিয়ে কিংবা জব বা উদ্যোগে বেরিয়ার এলে হাল না ছেড়ে এগিয়ে চলার কথা বলেছেন। তিনি পিএইচডি ডিগ্রি বা স্কিল ডেভেলপের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তি বাড়িয়ে মেয়েদের সাহসী হতে বলেন। দুর্বল হয়ে গেলে চলবে না। নিজেকে সময় দিয়ে গুছিয়ে নিতে বলেন তৃণা।

পাঠাওতে কাজ করছে, নুজহাত খান , তিনি বলেন, বিজনেস গ্রোথের জন্য ডেটা অনেক জরুরি। ডেটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। ক্যারিয়ার গঠনে, উন্নতি করতে ভার্সিটির পড়াশুনার পাশাপাশি মেয়েদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের উপর তিনি জোর দেন। তিনি বলেন, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কম কনফিডেন্ট। তাদের নেগোশিয়েশন স্কিল আপডেট করতে হবে।
১১ বছর ধরে কাজ করছেন সাদিয়া নাসিহ রাতুল। তিনি বর্তমানে পাঠাও লিমিটেড স্টাফ এসকিউএ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছে । পড়াশুনা করা কালীন সময়ে বিয়ে এবং সন্তানের মা হয়ে নিজেকে স্কিল আপডেটের উপর মনোযোগি করেন তিনি। তিনি , কিউএ ‘র সাথে ডেভেলপারদের কনফ্লিক্ট উউলে ধরেন। একটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে গেলে বাগ ফ্রি প্রোডাক্টে জোর দেয়া পারিপার্শিক মতভেদ তুলে ধরেন তিনি বলেন, বাগ ফ্রি সিস্টেম প্রদান করাই সফলতা। সাদিয়া, ফ্যামিলি লাইফ এবং ওয়ার্কিং লাইফ দুটোকে গুলিয়ে ফেলতে বারণ করেন। পেশাগত কাজে যত কম হেল্প নেয়া যায় ততই নিজের কনফিডেন্স বৃদ্ধি পায় বলে তিনি জানান। কিউএ সেক্টরে যারা আসতে চায় তাদের স্কিল ডেভেলপ নিয়ে যেন আসে সেই আহবান করেন এই বক্তা।
অনলাইনে সার্টিফিকেশন , দায়িত্বশীল আচরণ , এজাইল ম্যানিফেস্টো , টিম ওয়ার্ক নিয়ে কমিউনিকেটিভ সেশন নেন মোঃ শাহ জালাল যিনি সিনিয়র স্ক্রাম মাস্টার, চেক, একটি ক্যান্টালুপ প্ল্যাটফর্ম কোম্পানিতে কাজ করছেন।

বিজনেস থট ছাড়া কোডিং করা উচিত নয় বলে বলেন আয়শা আযমী, তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার L2, ব্রেন স্টেশন ২৩ এ কাজ করছেন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ইন্সট্যান্টলি কোড করতে যাওয়া যাবে না। রয়ে শয়ে বুঝে শুনে বিজনেস থট মেনে কোডিং করতে হবে। প্রফেশনাল লাইফের ঝক্কি সামলে উইকেন্ডগুলিতে রিফ্রেশ হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি । তিনি বেশ জোর দিয়ে বলেন, পারসোনাল লাইফ এবং প্রফেশনাল লাইফ এক করে ফেলবেন না ।
বেলা শেষে শুরু হয় লাইভ টক সেশন । তারপর আমুদে সকলের সাথে চলে ফটো সেশন । বন্ধুত্বপূর্ন কথোপকথনের মাধ্যমে পর্দা নামে টেকসিস্টার্সের এমন চমৎকার আয়োজনের। এই আয়োজনে অংশ নেন প্রায় অর্ধ শত অংশগ্রহণকারী যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন।
আয়োজনের অংশীদার ছিলেন,
প্ল্যাটিনাম অংশীদার: ডায়নামিক সলিউশন ইনোভেটরস (DSi), গোল্ড অংশীদার: রাইজআপ ল্যাবস, সম্প্রদায় অংশীদার: জেটব্রেইনস, অ্যাজাইল বাংলাদেশ, ভেন্যু অংশীদার: চেক ইনকর্পোরেটেড বাংলাদেশ অফিস,
মিডিয়া অংশীদার: টেকসিঁড়ি, টেক পাবলিক
টেকসিস্টার্স, প্রাণবন্ত এক কমিউনিটি গড়ে তুলতে চায় যেখানে মেয়েরা প্রযুক্তির জগতে নিজেকে নিরাপদ, সমর্থিত এবং ক্ষমতায়িত বোধ করবে।
লিখেছেন, তাহমিনা তানিয়া , কনটেন্ট এডিটর , টেকসিঁড়ি ডট কম।