টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে জাতিসংঘের একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিটি প্রতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টিকারী অপরাধ দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।
চুক্তির মূল দিকগুলি:
- স্বাক্ষরকারী দেশ: সপ্তাহান্তে প্রায় ৬৫টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
- কার্যকর হওয়া: মোট ৪০টি দেশের অনুমোদন বা অনুমোদনের (Ratification) পর এই কনভেনশনটি কার্যকর হবে।
- লক্ষ্য: জাতিসংঘ জানিয়েছে, ফিশিং, র্যানসমওয়্যার থেকে শুরু করে অনলাইন পাচার এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্য (Hate Speech) সহ বিস্তৃত পরিসরের অপরাধ এই চুক্তির লক্ষ্য।
- জাতিসংঘের বার্তা: জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চুক্তিটিকে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে একটি “শক্তিশালী, আইনত বাধ্যতামূলক হাতিয়ার” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাইবারস্পেস এখন অপরাধীদের জন্য উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে, যা অর্থনীতি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরি করছে।
- ভিয়েতনামের ভূমিকা: ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি লুং কুওং এই স্বাক্ষরকে বহুপাক্ষিকতার (Multilateralism) একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে দেশগুলি সাধারণ স্বার্থের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে ইচ্ছুক।
সমালোচনা ও উদ্বেগ:
চুক্তিটি মানবাধিকার কর্মী এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে :
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে চুক্তিতে অপরাধের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
- নজরদারির চুক্তি: মেটা (Meta) এবং মাইক্রোসফ্ট (Microsoft)-এর মতো সংস্থাগুলির সমন্বয়ে গঠিত সাইবারসিকিউরিটি টেক অ্যাকর্ড এই চুক্তিকে “নজরদারি চুক্তি” (Surveillance Treaty) বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের উদ্বেগ, এটি সরকারগুলির মধ্যে ডেটা ভাগাভাগিকে সহজ করবে এবং নীতিগত হ্যাকারদের (ethical hackers) অপরাধী হিসেবে গণ্য করতে পারে।
এই সমালোচনার জবাবে, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস (UNODC), যা আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছে, জানিয়েছে যে চুক্তিতে মানবাধিকার রক্ষার এবং বৈধ গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা হ্যানয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য কূটনীতিক এবং কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিল।
আয়োজক হিসেবে ভিয়েতনামের ভূমিকাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি দেশে “গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সমস্যা” চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে অনলাইন সেন্সরশিপও রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে এই বছর কমপক্ষে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে অনলাইনে ভিন্নমত প্রকাশের অভিযোগও রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মধ্যে ভিয়েতনাম এই চুক্তিটিকে তার বিশ্বব্যাপী অবস্থান এবং সাইবার প্রতিরক্ষা উন্নত করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে।
সুত্র রয়টার্স

