নেটওয়ার্কিং জগতে মাইক্রোটিক (MikroTik) একটি পরিচিত এবং বিশ্বস্ত নাম। এই লাতভিয়ান কোম্পানিটি নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম এবং সফটওয়্যার সমাধানের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। মাইক্রোটিকের পণ্য এবং সেবাগুলো ছোট থেকে বড় সব ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশেও মাইক্রোটিকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (ISP), কর্পোরেট নেটওয়ার্ক এবং এমনকি ব্যক্তিগত ব্যবহারেও এর চাহিদা ব্যাপক।
মাইক্রোটিকের ইতিহাস
মাইক্রোটিক ১৯৯৬ সালে লাতভিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে কোম্পানিটি ওয়্যারলেস প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তীতে রাউটার, সুইচ, ফায়ারওয়াল এবং নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সহ বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কিং সমাধান নিয়ে কাজ শুরু করে। মাইক্রোটিকের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হলো তাদের রাউটারবোর্ড এবং রাউটারওএস (RouterOS) সফটওয়্যার, যা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাকে সহজ এবং দক্ষ করে তোলে।
মাইক্রোটিকের প্রধান পণ্য ও সেবা
১. রাউটারবোর্ড: মাইক্রোটিকের রাউটারবোর্ডগুলো নেটওয়ার্কিং জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এগুলো উচ্চ কর্মক্ষমতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য পরিচিত। বিভিন্ন মডেলের রাউটারবোর্ড রয়েছে, যা ছোট অফিস থেকে শুরু করে বড় ডাটা সেন্টারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
২. রাউটারওএস (RouterOS): এটি মাইক্রোটিকের অপারেটিং সিস্টেম, যা রাউটারবোর্ড এবং অন্যান্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়। রাউটারওএসে রয়েছে ফায়ারওয়াল, VPN, QoS, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং, এবং আরও অনেক ফিচার, যা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে তোলে।
৩. সুইচ এবং ওয়্যারলেস ডিভাইস: মাইক্রোটিকের সুইচ এবং ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলোও অত্যন্ত জনপ্রিয়। এগুলো উচ্চ গতি এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য পরিচিত।
৪. নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস: মাইক্রোটিকের Winbox এবং Webfig এর মতো টুলস নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের জন্য নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাকে সহজ এবং দক্ষ করে তোলে।
বাংলাদেশে মাইক্রোটিকের জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশে মাইক্রোটিকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (ISP) কোম্পানিগুলো মাইক্রোটিকের রাউটারবোর্ড এবং রাউটারওএস ব্যবহার করে তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা করছে। এছাড়াও, কর্পোরেট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি ব্যক্তিগত ব্যবহারেও মাইক্রোটিকের পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাইক্রোটিকের পণ্যগুলো সাশ্রয়ী মূল্যের এবং উচ্চ কর্মক্ষমতার জন্য বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়াও, মাইক্রোটিকের পণ্যগুলো সহজে কাস্টমাইজ এবং কনফিগার করা যায়, যা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
মাইক্রোটিকের সুবিধা
১. সাশ্রয়ী মূল্য: মাইক্রোটিকের পণ্যগুলো অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যের, যা ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আদর্শ।
২. উচ্চ কর্মক্ষমতা: মাইক্রোটিকের রাউটারবোর্ড এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলো উচ্চ কর্মক্ষমতা প্রদান করে, যা বড় নেটওয়ার্কেও ব্যবহার করা যায়।
৩. নমনীয়তা: রাউটারওএসের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক কনফিগারেশন এবং ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত নমনীয় এবং সহজ।
৪. বহুমুখীতা: মাইক্রোটিকের পণ্যগুলো বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কিং চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
চ্যালেঞ্জ
যদিও মাইক্রোটিকের পণ্যগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য রাউটারওএস কনফিগারেশন কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। এছাড়াও, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং ডকুমেন্টেশনের ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।
সবশেষ
মাইক্রোটিক নেটওয়ার্কিং জগতে একটি বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য নাম। এর সাশ্রয়ী মূল্য, উচ্চ কর্মক্ষমতা এবং নমনীয়তা এটিকে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করে তুলেছে। নেটওয়ার্কিং সমাধানের জন্য মাইক্রোটিক একটি উত্তম পছন্দ, যা ছোট থেকে বড় সব ধরনের নেটওয়ার্ক চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ভবিষ্যতে মাইক্রোটিকের আরও উন্নতি এবং উদ্ভাবন নেটওয়ার্কিং জগতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা যায়।
সম্পাদনাঃ সামিউল হক সুমন, নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি – বাংলাদেশ