টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : ‘আইএসপির ওপর নির্ভর করে একটি ডিজিটাল জগত তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি নিজের গতিপথ খুঁজে নেবে। তাকে আটকানো সম্ভব না। মেলার মাধ্যেমে নতুন উদ্যেক্তারা টেলিকম ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারবে। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান প্রসারিত করতে পারবে।’
১৫ জানুয়ারী বুধবার সকালে “জিইসি কনভেনশন সেন্টার চট্টগ্রামে বেলুন উড়িয়ে তিন দিনব্যাপি ‘চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ার-২০২৫” এর উদ্বোধন করবার সময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী, ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি, টিই (অবঃ) উপরের কথাগুলো বলেন।
আইসিটি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এখন সংস্কারের সময়। কাজ করার সময়। আমি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সদস্যদের কথায় সংস্কারের সুর পাচ্ছি না। প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে আমাদের সেবা দিতে হবে। আমাদের কোলাবোরেটিভ (সহযোগীতামূলক) মডেলে আসতে হবে। আমিও আইএসপিকে (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) সে মডেলের দিকে আসতে আহবান জানাই। সহযোগিতা করলে দুয়ে দুয়ে পাঁচ হবে, তিন হবে না। আমাদের প্রায়োরিটি দিতে হবে সার্ভিসকে। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতামূলক মডেলে ব্যবসা পরিচালনা করার কথা বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুল আমিন বলেন, ‘আমরা একটি প্রযুক্তিবান্ধব শহর গড়ে তুলতে চাই। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সেসব করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আইএসপিদেরকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় আমরা করব।’
এদিকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আইএসপিএবির সভাপতি মো: ইমদাদুল হক বলেন, ‘আইএসপির সুযোগ সুবিধা এখন তলানিতে। পরিচয় দেওয়ার মতো অবস্থায় রাখেনি। এমন পরিস্থিতিই আছে এখন। আইএসপি ব্যবসায় মধ্যসত্বভোগী তৈরী হয়েছে। লাইসেন্স আপগ্রেডেশন হচ্ছে না। বিগত দিনগলোতে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি। এখন আবার এসওএফ চালু হয়েছে। এনটিটিএন লাইসেন্স দুই/তিন টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আইএসপি সদস্য হইতে এনটিটিএন লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করা হলেও বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে লাইসেন্স বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের ওপর নানা ভ্যাট ট্যাক্স বসানো হচ্ছে।”এরকম হলে অনেক বড় উদ্যোক্তাও এ সেক্টর থেকে হারিয়ে যাবে। অনেকে অবৈধ আইএসপি ব্যবসা করছে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিটিআরসিকে কঠোর করতে হবে। অবৈধ আইএসপি বন্ধ না হলে শৃংখলা ফিরে আসবে না।’
আইএসপিএবির সেক্রেটারী জেনারেল নাজমুল করিম ভূঁঞা বলেন, আইএসপিরা দেশের টাকা পাচার করে না। দেশের টাকা দেশে রাখে। আমাদের কাজে কোনো ত্রুটি থাকলে আইনের শাসন আমরা মাথা পেতে নেব । যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ইন্ডাষ্ট্রিদেরকে নিয়ে কাজ করার কথা তিনি বলেন।
‘চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ার ২০২৫, ১৬ জনিুয়ারী দ্বিতীয় দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মুনীর হাসান ২০৩৭ সালের মধ্যে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বদৌলতে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরেকটি বড় বিপ্লবের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
‘দ্যা রাইস অফ এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) আনলকিং টুমরোস পসিবিলিটি’- শীর্ষক এ সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাব দেন মুনীর হাসানসহ অতিথিরা।
সেমিনারের মূল বক্তা মুনীর হাসান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে প্রতি ১৫ বছর পর পর একটি বিপ্লব হচ্ছে। ১৯৯২ সালে প্রথম বিপ্লব ছিল ইন্টারনেটের বিকাশ। ২০০৭ সালে পেলাম স্মার্টফোন। স্মার্টফোন কিন্তু ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর ছিল। ইন্টারনেটের কারণেই স্মার্টফোন বিকশিত হয়েছে। আমাদের হাতের মুঠোয় দুনিয়াটা চলে এসেছে। তার ১৫ বছর পর ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি আসলো এবং এর আর্টিফিশিয়াল বিপ্লবটি আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। সে হিসেবে আমি মনে করছি ২০৩৭ সালের দিকে আরেকটি নতুন বিপ্লব হবে।’
‘আগের শিল্প বিপ্লবগুলো হয়েছে স্ট্রিমপাওয়ার, ইলেকট্রিসিটি এবং ট্রানজিস্টার। কিন্তু এগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটার কোনো যোগসূত্র ছিল না। এখন আমরা দেখছি ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেকশন হচ্ছে স্মার্টফোনের। এ দুটোর সঙ্গে কানেক্টেড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এ তিনটার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু সামনে বিপ্লব হবে।’
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজম্মকে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার- এগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। শুধুমাত্র দক্ষ হলে হবে আবার তা-ও না। আমরা যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করবো আমাদের সিস্টেমেটিক হতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফাইবার হোম লিমিটেড বাংলাদেশের চীফ ইনফরমেশন অফিসার সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব। এগুলো আমরা ব্যবহার করবো যাতে আমাদের কাজ সহজ ও তাড়াতাড়ি করতে পারি। সেটাকে ব্যবহার করবো কাজ তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার জন্য। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর যা হোক মানুষ না। কাজেই সেটা যেন আমাদের নিয়ন্ত্রক না হয়ে ওঠে।’
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টুটুন চন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘এআই বা রোবোটিকস দুটিই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। দিনকে দিন প্রসেসর ছোট হচ্ছে। মাইক্রো ইলেকট্রনিকস এ বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা এটা নিয়ে কাজ করছে। অনেকে বলে বাংলাদেশে এআই একটি হুমকি হিসেবে আসবে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে সুবিধাও নেওয়া যাবে।’
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক আজিজ জাহেদ বলেন, ‘এআই এর ব্যবহার আমাদের সহযোগিতা করবে। তবে সেটাকে দিয়ে পুরো কাজ করানো যাবে না। মূল কতৃত্ব আমাদের নিজ হাতে রাখতে হবে এবং এর প্রসেসটা আমাদের শিখতে হবে।
সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান সিডাটার রিজিওনাল সেলস অফিসার জ্যাকি চাইসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
মেলার দ্বিতীয়দিন সকালে আন্ত:স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরীর আটটি স্কুল অংশ নেয়। স্কুলগুলো হলো-সিলভার বেলস কিন্ডারগার্টেন এন্ড গার্লস হাই স্কুল, আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ।
মেলা প্রাঙ্গনজুড়ে বিভিন্ন স্টলে দ্বিতীয় দিনেও প্রচুর দশনার্থী ছিল। নানা বয়সী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ছিল পুরো আয়োজন। ১৭ জানুয়ারী , শুক্রবার মেলার শেষ দিন ।
আরও পড়ুন