টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ ১৯৮৪ সাল। সান ফ্রান্সিস্কোর এক ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে দুইজন স্বপ্নবাজ প্রকৌশলী, স্যান্ডি লার্নার এবং লেন বোসাক, একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বকে আরও বেশি সংযুক্ত করা। সেই ছোট্ট শুরু থেকেই আজকের সিস্কো সিস্টেমস বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালে সিস্কো তার ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে, যা শুধু একটি কোম্পানির সাফল্যের গল্প নয়, বরং প্রযুক্তি জগতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়।
শুরুর গল্প: একটি রাউটারের জন্ম
সিস্কোর যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি সাধারণ সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে। স্যান্ডি এবং লেন লক্ষ্য করেছিলেন যে বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তারা বিশ্বের প্রথম মাল্টি-প্রোটোকল রাউটার তৈরি করেন, যা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক প্রোটোকলকে একসাথে কাজ করতে সক্ষম করে। এই উদ্ভাবনই সিস্কোকে নেটওয়ার্কিং জগতে এক অনন্য স্থান দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ
১৯৯০-এর দশকে সিস্কো তার প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। ইন্টারনেটের বিস্ফোরণ এবং ডিজিটাল বিপ্লবের সাথে সাথে সিস্কো রাউটার, সুইচ এবং নেটওয়ার্কিং সরঞ্জামগুলোর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কোম্পানিটি শুধু হার্ডওয়্যারেই নয়, সফটওয়্যার এবং নেটওয়ার্ক সুরক্ষা সমাধানেও নিজেদের প্রসারিত করে।
ইনোভেশন এবং একুইজিশনের মাধ্যমে বৃদ্ধি
সিস্কোর সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো এর নিরবচ্ছিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং কৌশলগত একুইজিশন। গত চার দশকে সিস্কো ২০০টিরও বেশি কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো WebEx, Meraki, এবং Duo Security। এই একুইজিশনগুলোর মাধ্যমে সিস্কো ক্লাউড কম্পিউটিং, সাইবার সিকিউরিটি এবং ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এর মতো নতুন প্রযুক্তি খাতেও নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।
বাংলাদেশে সিস্কোর প্রভাব
বাংলাদেশে সিস্কোর প্রযুক্তি টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, শিক্ষা এবং সরকারি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। দেশের ডিজিটালাইজেশন এবং ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) প্রসারে সিস্কোর নেটওয়ার্কিং সমাধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও, সিস্কো নেটওয়ার্ক একাডেমি প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের নেটওয়ার্কিং এবং আইটি দক্ষতা উন্নয়নে অবদান রাখছে।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি
সিস্কো তার ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে শুধু অতীতের সাফল্য নয়, ভবিষ্যতের দিকেও দৃষ্টি রাখছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ৫জি প্রযুক্তি, এবং ক্লাউড-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে সিস্কো আগামী দিনের নেটওয়ার্কিং জগতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কোম্পানিটি টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকেও জোর দিচ্ছে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
সবশেষ
সিস্কোর ৪০ বছরের যাত্রা শুধু একটি কোম্পানির সাফল্যের গল্প নয়, এটি প্রযুক্তি জগতে এক অনন্য অধ্যায়। বিশ্বকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠান আজ কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিস্কোর প্রযুক্তি ডিজিটাল বিপ্লবের মূলে রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে সিস্কো আরও নতুন উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বকে আরও বেশি সংযুক্ত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সিস্কোর এই যাত্রা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের গল্প নয়, এটি একটি স্বপ্নের গল্প, যা বিশ্বকে দেখিয়েছে কীভাবে প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে।