বাংলাদেশের ই-কমার্স শিল্প সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২১ সালে এই খাতের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৬,৮৭০ কোটি টাকা, যা ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, নীতিনির্ধারণ ও সুশাসনের অভাবের কারণে ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ই কমার্স নিয়ে আজকে বিস্তারিতে লিখেছেন টেকনোপ্রেনিয়র ও ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট মোহাম্মদ মোস্তফা জামান।
প্রধান সমস্যা
বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসার প্রায় ৭০% লেনদেন ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে যথাযথ নিবন্ধন, গ্রাহক সুরক্ষা, এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সংক্রান্ত নীতিমালা স্পষ্ট নয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার ফেসবুক পেজ খুচরা ও পাইকারি পণ্য বিক্রয়ে নিয়োজিত। তবে, এদের মধ্যে অনেকেই অনিবন্ধিত থাকায় গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
মিথ্যা লেনদেন ও গ্রাহক প্রতারণা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ই-কমার্সে বছরে প্রায় ৩০% পর্যন্ত ভুয়া লেনদেন হয়ে থাকে, যা গ্রাহকদের বিশ্বাস নষ্ট করছে। ফেসবুকভিত্তিক অনেক ব্যবসা নগদ বা ব্যাংক লেনদেনের পরিবর্তে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করলেও, কোনো নিয়মকানুন না থাকায় পেমেন্ট নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
সমাধান ও নীতিমালা প্রয়োজন
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। আমি মনে করি, একটি শক্তিশালী ই-কমার্স রেগুলেটরি বোর্ড গঠন করে প্রতিটি অনলাইন ব্যবসাকে নিবন্ধিত করা দরকার।
পরামর্শ:
সকল ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ইউনিক আইডি ও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য KYC (Know Your Customer) ও যাচাইযোগ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করা প্রয়োজন।
এসক্রো পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা দরকার, যেখানে পণ্য ডেলিভারির পর টাকা ছাড় করা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য একটি পৃথক অনলাইন অভিযোগ মেকানিজম থাকতে হবে, যাতে দ্রুত প্রতিকার সম্ভব হয়।
ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নৈতিক ও স্বচ্ছ ব্যবসা পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আমার মন্তব্য:
বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের বিশাল সম্ভাবনা আছে, তবে সঠিক নীতিমালা না থাকলে এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না। গ্রাহক সুরক্ষা, লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করলে আমরা একটি নিরাপদ ও কার্যকর ডিজিটাল ইকোনমি গড়ে তুলতে পারব।