টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবট কি অন্ধ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবন উন্নত করতে পারে ? দৃষ্টিহীন বা আংশিকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানো ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা সহজ ও স্বাধীন করতে নানা ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে।
১৫ অক্টোবর জাতীয় সাদাছড়ি দিবস । সাদাছড়ি বিশ্বজুডে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতীক। তাদের নিরাপদ পথচলা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘সাদাছড়ির আধুনিকায়ন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন’।
আসুন সহায়ক প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে জেনে নিই। এগুলোকে সাধারণত কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় ঃ
১. স্ক্রিন রিডার (Screen Readers) ও ডিজিটাল অ্যাক্সেস
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারে।
- স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার: এটি স্ক্রিনের লেখা এবং আইকনগুলোকে অডিও বা ব্রেইল আউটপুটে রূপান্তর করে।
- JAWS (Job Access With Speech): উইন্ডোজ কম্পিউটারের জন্য একটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার যা টেক্সট-টু-স্পিচ এবং ব্রেইল আউটপুট দেয়।
- NVDA (Non-Visual Desktop Access): উইন্ডোজের জন্য একটি বিনামূল্যের বিকল্প স্ক্রিন রিডার।
- VoiceOver: অ্যাপলের ডিভাইস (Mac, iPhone, iPad) গুলোতে বিল্ট-ইন (অন্তর্নির্মিত) স্ক্রিন রিডার।
- TalkBack: অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে বিল্ট-ইন স্ক্রিন রিডার।
- টেক্সট-টু-স্পিচ (Text-to-Speech – TTS): যেকোনো ডিজিটাল লেখা বা মুদ্রিত লেখাকে স্ক্যান করে কথায় রূপান্তর করে।
২. ব্রেইল-ভিত্তিক ডিভাইস
এগুলো স্পর্শের মাধ্যমে তথ্য পড়তে ও লিখতে সাহায্য করে।
- রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লে (Refreshable Braille Display): এটি একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে টেক্সট বা অক্ষর ব্রেইল বিন্দুতে রূপান্তর করে এবং এই বিন্দুগুলো প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে, যার ফলে ব্যবহারকারী স্পর্শ করে পড়তে পারে।
- ব্রেইল নোটটেকার (Braille Notetaker): বহনযোগ্য ডিভাইস, যেখানে ব্রেইল কি-বোর্ড থাকে। এটি নোট লেখা, সংরক্ষণ করা এবং বই পড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। (যেমন: ব্রেইল সেন্স U2)।
- ব্রেইল স্মার্টওয়াচ: এই স্মার্টওয়াচগুলো ডিসপ্লেতে ব্রেইল বিন্দু ব্যবহার করে মেসেজ বা অন্যান্য তথ্য প্রদর্শন করে।
৩. নেভিগেশন ও চলাচলের সহায়ক প্রযুক্তি
দৃষ্টিহীনদের নিরাপদে এবং স্বাধীনভাবে চলাচল করতে সাহায্য করে কিছু ডিভাইস। যেমন ,
- স্মার্ট কেন/স্মার্ট স্টিক (Smart Cane): আধুনিক লাঠি যাতে আল্ট্রাসনিক সেন্সর, জিপিএস এবং কখনও কখনও এআই (AI) প্রযুক্তি যুক্ত থাকে। এটি সামনের বাধা, গর্ত বা ট্র্যাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে অডিও সতর্কবার্তা দেয়।
- অ্যাক্সেসিবল জিপিএস ডিভাইস ও অ্যাপস: স্মার্টফোনের অ্যাপ (যেমন: WeMap) বা বিশেষ ডিভাইস যা মোড় ঘোরার নির্দেশনা, স্থান শনাক্তকরণ বা আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সম্পর্কে ভয়েস নির্দেশনা দেয়।
- স্মার্ট ভিশন গ্লাস: কিছু চশমা আল্ট্রাসনিক সেন্সর ব্যবহার করে ব্যবহারকারীকে তার চারপাশের বাধা সম্পর্কে সতর্ক করে।
৪. লো ভিশন (Low Vision) সহায়ক প্রযুক্তি
যাদের সামান্য দৃষ্টিশক্তি অবশিষ্ট আছে, তাদের জন্য এই প্রযুক্তিগুলো খুবই উপযোগী। আসুন জেনে নিই ।
- স্ক্রিন ম্যাগনিফায়ার (Screen Magnifiers): সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের স্ক্রিনকে অনেক বড় করে দেখায়। উইন্ডোজ ও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে এই সুবিধা থাকে।
- ভিডিও ম্যাগনিফায়ার/ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (CCTV): একটি ক্যামেরা দিয়ে ছাপা লেখা বা ছবিকে বড় করে স্ক্রিনে দেখায়। এটি হাতে ধরা বা ডেস্কটপে বসানো—দুই ধরনেরই হয়।
- হাই কনট্রাস্ট মোড (High Contrast Mode): ডিসপ্লেতে টেক্সটের রঙ এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙ এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যাতে লেখা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
৫. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অন্যান্য সেবা
সাম্প্রতিক সময়ে এআই দৃষ্টিহীনদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সেগুলো কি কি চলুন জেনে নেয়া যাক।
- “বি মাই আইস” (Be My Eyes) অ্যাপ: এটি দৃষ্টিহীন ব্যবহারকারীকে লাইভ ভিডিও কলের মাধ্যমে একজন স্বেচ্ছাসেবক বা এআই টুলের সাথে যুক্ত করে। স্বেচ্ছাসেবক বা এআই ক্যামেরায় আসা দৃশ্য দেখে ব্যবহারকারীকে বর্ণনা করে সাহায্য করে।
- এআই-ভিত্তিক চিত্র বর্ণনা: ফেসবুক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে অন্ধ ব্যবহারকারীকে ছবির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়।
- ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (Voice Assistant): গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অ্যামাজন অ্যালেক্সার মতো ভয়েস-নিয়ন্ত্রিত ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা বিভিন্ন কাজ করতে পারে (যেমন: ক্যালেন্ডার ম্যানেজ করা, লাইট নিয়ন্ত্রণ করা)।