টেকিসিঁড়ি রিপোর্টঃ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘এটুআই প্রকল্পের ৮৫৫ কোটি টাকা দুর্নীতি/আত্মসাৎ/লুটপাট/অনিয়ম: দুদকের অভিযান’ উল্লেখিত সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই প্রোগ্রাম-এর প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা দিয়েছে ।
তাদের লিখিত বার্তায় জানা যায়, উল্লেখিত সংবাদসমূহে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর বরাত দিয়ে এটুআই প্রকল্পের ৮৫৫ কোটি টাকার অনিয়মে কিংবা দুর্নীতির যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা সঠিক নয়। সংবাদে প্রচারিত ও প্রকাশিত দুদক কর্মকর্তার বক্তব্যের কোথাও তিনি এটুআই প্রকল্পের ৮৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি/আত্মসাৎ/লুটপাট/অনিয়ম বিষয়টি উল্লেখ করেন নি। বরং দুদক কর্মকর্তা এটুআই প্রকল্পে প্রকিউরমেন্ট, নিয়োগ, বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং নানা বিষয়ের অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করেন। দুদক কর্মকর্তা তাঁর বক্তব্যে জানান, তাদের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করছেন যে এ ধরনের অনিয়ম থাকতে পারে, তবে রেকর্ডপত্র আরো যাচাই-বাছাই করতে হবে।
এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের চলমান প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২০ সালে অনুমোদন হয়, যার মেয়াদকাল ছিল জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ এবং বাজেট ছিল ৪৮৫.৪৪ কোটি (সরকারি খাত: ৪০৩.৬৪ কোটি এবং উন্নয়ন সহযোগী অনুদান: ৮১.৭৯ কোটি)। পরবর্তীতে এর প্রকল্পটি সংশোধিত হয়ে এর ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজেটও বৃদ্ধি হয়। যার মোট বাজেট অনুমোদিত হয় ৮৫৫.৪৭ কোটি টাকা (সরকারি খাত: ৫৫৩.৬৪ কোটি এবং উন্নয়ন সহযোগী অনুদান: ৩০১.৮৩ কোটি)।
জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ সাল সময়ে ০৫ বছরে সর্বমোট খরচ হয়েছে ৫৬৮.৫৪ কোটি টাকা (সরকারি খাত: ৪০২.৪৯ কোটি এবং উন্নয়ন সহযোগী অনুদান: ১৬৬.০৫ কোটি)। এর আওতাধীন সকল ক্রয় কার্যক্রম (প্রকিউরমেন্ট) বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধি (পিপিএ, ২০০৬ ও পিপিআর, ২০০৮) অনুসরণ করে যথাযথভাবে সম্পাদন করা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নের খরচের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সরকারি অডিট টিম দ্বারা যথারীতি প্রতিবছর অডিট সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী অনুদান অংশের খরচের অডিট বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর (FAPAD) কর্তৃক এবং ইউএনডিপি কর্তৃক নিযুক্ত সিএ ফার্ম দ্বারা পুনরায় অডিট সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রকল্পের এই মেয়াদে ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নাগরিক সেবা উদ্ভাবনে এটুআই নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উল্লেখযোগ্য উদ্যোগসমূহের মধ্যে রয়েছে: সরকারের ৩৪ হাজারের অধিক দপ্তরের (মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য দপ্তর) সমন্বিত ওয়েব প্ল্যাটফর্ম জাতীয় তথ্য বাতায়ন, ১৫ হাজারের অধিক সরকারি দপ্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে দক্ষ ও পুরোপুরি কাগজবিহীন করার প্ল্যাটফর্ম ‘ই-নথি/ডি-নথি’, সরকারি সেবার সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ‘মাইগভ’, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩, প্রান্তিক জনগণের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল সেন্টার, বিচারিক কার্যক্রমে বিচার বিভাগীয় বাতায়ন, অনলাইন কজলিস্ট (ই-কার্যতালিকা), জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড ও আমার আদালত (মাইকোর্ট), অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (জিআরএস), রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, শিক্ষকদের জন্য ‘শিক্ষক বাতায়ন’, অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তপাঠ’ সহ ৩০টিরও অধিক বিভিন্ন উদ্যোগ।
একই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও কারিগরি ব্যবস্থাপনা, প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সক্ষমতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন, সরকারি দপ্তরে উদ্ভাবনী সংস্কৃতির প্রচলনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এই প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির মোট বাজেটের পুরো অংশ ৮৫৫ কোটি টাকা অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পাশাপাশি গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদটি সঠিক নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং পেশাগত দিক বিবেচনায় সঠিক তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আরো সচেতনতার অনুরোধ জানানো হয়েছে।