টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : অবশেষে কম্পিউটারে বাংলা টাইপিংয়ে যুগান্তকারী অবদানের জন্য অভ্র কীবোর্ডের স্রষ্টা ডাক্তার মেহদী হাসান খান সহ তাঁর ৩ বন্ধু রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম, শাবাব মুস্তাফা ২০২৫ সালের মর্যাদাপূর্ণ একুশে পদক পাচ্ছেন ।
বিনামূল্যের এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব কীবোর্ড কোটি কোটি মানুষের জন্য বাংলা টাইপ করা সহজ করে তুলেছে, যা ডিজিটাল বিশ্বে ভাষাটির প্রচার ও সংরক্ষণে সহায়তা করেছে।
এই স্বীকৃতি ভার্চুয়াল জগতে সকলের কাছে বাংলা ভাষা সহজলভ্য করার জন্য তার নিষ্ঠার প্রতিফলন ঘটায়। সামাজিক মাধ্যমে চলছে অভিনন্দনের জোয়ার। অনেকেই লিখছেন , আরো আগে পেলে ভালো হতো।
মেহদী হাসান খানের জন্ম ঢাকায়। তিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। তার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। ২০০৩ সালে তিনি ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।
২০০৩ সালের ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো অভ্র কী-বোর্ড উন্মুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওমিক্রনল্যাব থেকে এটি মুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজেও অভ্র ব্যবহার করেছে।
এক নজরে দেখে নিন এবার কারা কারা একুশে পদক পাচ্ছেন।
সুলতানা নাহিদ লেখেন, আজকের দিনের সবচেয়ে সুসংবাদ। অভ্র কীবোর্ড এর আবিস্কারক মেহেদী হাসান এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক পাচ্ছেন। “ভাষা হোক উন্মুক্ত”এই স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো অভ্র। মেহেদী হাসান শুধু ভাষাকে উন্মুক্ত করেননি , ডিজিটাল প্লাটফর্মে সহজে বাংলা লেখার সুযোগ তৈরী করে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে কবি সাহিত্যিক বানিয়ে ফেলেছেন। নইলে আজকে বাংলা প্রেমের কবিতাও ইংরেজিতে লিখতে হতো। আমি তোমাকে ভালোবাসির যায়গায় লোকজন লিখতো Ami tmk vlobasi। মুরাদ টাকলা ভাষায় হতো ভাবের আদান প্রদান। ভয়ংকর বিষয়! কিছু কিছু ঋন শোধ হয় না, তবু প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া হয়েছে দেখলে ভালো লাগে।
তাহমিনা কবীর লেখেন, অনেক মন্দ কিছুর ভিড়ে একটা ভালো খবর। একুশে পদক ২০২৫ পেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও অভ্র কি-বোর্ডের জনক, মেহেদী হাসান খান।
সাব্বির আহমেদ লেখেন, জেনে খুবই অবাক এবং লজ্জিত হলাম, কাজের সম্মাননা পাওয়ার জন্য নাকি এদেশে আবেদন করতে হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে সম্মাননা পাওয়ার জন্য আবেদন করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। অভ্র কীবোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসান খান তাঁর ব্যতিক্রম নন। অবশেষে তিনি একুশে পদক পেলেন। অভিনন্দন! সম্মাননা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে হয়তো কোনোদিনই তাঁর প্রাপ্য এই সম্মান পাওয়া হত না। যিনি বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করেছেন, যার জন্য আমাদের বাংলিশ লিখতে হয় না, তাঁর এই সম্মাননা এতদিন না পাওয়ার কারণ আমাদের দেশের চাটুকারিতার প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস। আমাদের লজ্জা হবে কবে?
সাব্বির রহমান লেখেন, ময়মনসিংহ মেডিকেলের স্টুডেন্ট থাকাকালীন অভ্র বানিয়ে তা বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন অথচ তার ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে শোনা যে অভ্র তৈরীর পুরো সময়টাতে তিনি প্রায় নির্ঘুম থাকতেন, ক্লোজ সার্কেলের কারো ফোনও ধরতে পারতেন না। এরপর……ভাষা করে দিলেন সবার জন্য উন্মুক্ত। চাইলেও কোটি টাকার বিজনেস দাড় করিয়ে ফেলা যেতো কিন্তু মনন আর মগজে নি:স্বার্থ ইনভেস্টমেন্টই বেশি পছন্দের ছিলো। তাই আমাদের লেখালেখির জীবনকে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে বিনিময় ছাড়াই সহজ আর সুন্দর করে দিলেন।