টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, আইএসপিএবি’র সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, আইআইজিবি সভাপতি আমিনুল হাকিম, বেসিস সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, রবি’র সিনিয়র ডিরেক্টর অনামিকা ভক্ত, গ্রামীনফোনের হোসেন সাদাত, এমটব এর হেড অব কমিউনিকেশন আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিকম বিশেষজ্ঞ মুস্তাফা মাহমুদ হুসাইন।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন টেলিকম খাতের দুর্নীতির শ্বেত পত্র প্রকাশের দাবি তুলেছেন ।
বিগত সরকারের সময়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত সরকার নিজেদের ব্রুটাল পলিটিক্যাল অপারেশন ধামাচাপা দিতে ইন্টারনেট শাটডাউন করেছিলো। এটা আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে বিটিআরসিকে স্বাধীন কমিশন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন ও টিপ্যাপ এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় ইশরাক আরো বলেন, বিএনপি’র ৩৩ দফার মধ্যে ৯ম দফায় সকল সংবিধিবদ্ধ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সে হিসেবে বিটিআরসি এখন পর্যন্ত রেগুলেট করে ব্যারিয়ার সৃষ্টি করছে। লাইসেন্সিং দেয়ার ক্ষেত্রে ৭-৮টি লেয়ার তৈরি করেছে। এটা রিফর্ম করতে হবে। অবকাঠামো শেয়ারের জন্য বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষায় আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যুত ও অন্যান্য খাতের মতো টেলিকম খাতেও নিরবে নিভৃতে লুটপাট চালানো হয়েছে। এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা জনতে টেলিকম খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশ করার করা হোক। জনগণের করে টাকায় বানানো ইনফো সরকার-১, ইনফোসরকার-২ এর মতো অবকাঠামো বিশেষ ব্যক্তির বা কোম্পানিকে সরকার টোটাল অথরিটি দিয়ে তাদের পার্সোনাল প্রপার্টির মতো ব্যবহার করে মহা দুর্নীতি করেছে। সেখানে একচেটিয়া কারবারের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট সহজ ও সুলভ করতে ইনফো সরকার করা হলেও এটা নিয়ে ডুয়োপলি-মনোপলি করে অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। এটা প্রতিরোধে নীতিমালা করতে হবে।
আলোচনায় সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক বলেন, বিটিআরসিতে যারা ছিলেন তারা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তারা রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্টদের সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যেসব কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন প্রায় সবকটি লেয়ারে লাইসেন্স ছিলো, তারা প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা খর্ব করেছে। একই কোম্পানিকে সব লেয়ারে লাইসেন্স দেওয়া কোনভাবেই উচিত নয়। এতে মিডিয়াম ও ছোট অপারেটররা ব্যবসা করতে পারিনি। অবশ্যই এটি দেখার স্কোপ ছিলো।
তিনি আরো বলেন, ৩ হাজার আইএসপিএবি লাইসেন্স আছে। ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা বিনিয়োগ করেছি। আমরা আইএসপিএবিকে সোস্যাল ব্যবসার পর্যায়ে নিয়ে গেছি। এতোটা স্বল্পমূল্যে বিশ্বের আর কোথাও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়না। মাত্র ৫০০ টাকায় আমরা আনলিমিটেড গুড কোয়ালিটির ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মোবাইল অপারেটররা ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় আসতে চাচ্ছে। আমরা শুনেছি একটি অপারেটর আইএসপিএবি লাইসেন্সের জন্যে আবেদন করেছে। এটি কোনভাবেই উচিত হবেনা। আমরা আইএসপিএবি অপারেটররা তা মেনে নিবোনা। আমরা চাইবোনা এই লেয়ারে তারা ব্যবসা করুক। তাহলে আমাদের ব্যবসাই থাকবে না। বরং বিশ্বের বিভন্ন উন্নত দেশে আইএসপিএবি এমভিএনও হয়ে মোবাইল সার্ভিস দেয়। সরকার এটি নিয়ে ভাবতে পারে। বিটিআরসিতে ক্যারিয়ারে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তব্যে খালেদ আবু নাসের বলেন, টেলিকম খাতটি আর্থনিীতির বিভিন্ন খাতের সঙ্গে জড়িত। প্রতিযোগিতা কমিশন বাজার ভারসাম্য রক্ষায় যে কয়টি ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করে তার অন্যতম। এই খাতটি অর্থনীতি, সামাজিক, স্থাস্থ্য, বিনোদন, পরিবহন আর্থিক সেবা খাত এমনটি আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই গাড়িটি ঠিক ঠাক চলছে না। আইএসপিগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। তাই তাদের সুরক্ষা করা বিটিআরসি’র দায়িত্ব। বিদ্যমান লাইসেন্সধারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বাজার যেন একচেটিয়া না হয় সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে।