টেকসিঁড়ি রিপোর্টঃ সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনমনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে প্রযুক্তিনির্ভর এক ব্যবস্থা। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব হলেও, কম্পন শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছে গুগল-এর ‘অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়াক অ্যালার্ট সিস্টেম’।
গুগলের এই সিস্টেম কীভাবে কাজ করে?
২০২০ সালে গুগল এই প্রযুক্তিটি অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে চালু করে। এটি মূলত কোটি কোটি সক্রিয় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে ছোট আকারের ‘সিসমোমিটার’ বা ভূকম্পন পরিমাপক হিসেবে ব্যবহার করে।
সেন্সর ব্যবহার:স্মার্টফোনের ভেতরে থাকা অ্যাক্সিলারেমিটার (Accelerometer) সেন্সর মাটির প্রাথমিক কম্পন বা ‘P’ (Primary) তরঙ্গ শনাক্ত করে।
তথ্য বিশ্লেষণ: কম্পন ধরা পড়লে ফোন সেই তথ্য দ্রুত গুগলের সার্ভারে পাঠায়। যখন একই এলাকা থেকে একাধিক ডিভাইস একই সময়ে কম্পনের সংকেত পাঠায়, তখন গুগলের সার্ভার দ্রুত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়।
সতর্কতা: এর পরপরই ওই অঞ্চলের বা আশপাশের ব্যবহারকারীদের ফোনে উচ্চশব্দে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়, যার ফলে কম্পন পৌঁছানোর আগেই মানুষ নিরাপদে সরে যাওয়ার বা প্রস্তুত হওয়ার জন্য কয়েক সেকেন্ডের মূল্যবান সময় পায়।
দুই ধরনের সতর্কতা:
ভূমিকম্পের মাত্রা অনুযায়ী গুগল দুই ধরনের সতর্কবার্তা প্রদান করে:
১. ‘Be Aware’ (সচেতন হন): সাধারণত রিখটার স্কেলে ৪.৫ মাত্রা বা তার কম কম্পনের ক্ষেত্রে এই সতর্কতা আসে।
২. ‘Take Action’ (ব্যবস্থা নিন): ৪.৫-এর বেশি মাত্রার কম্পনে এই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। এই সময় ফোনে অ্যালার্ম বাজে এবং নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়।
সতর্কবার্তা চালু করার পদ্ধতি:
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই জরুরি সতর্কতা চালু আছে কিনা, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এটি সাধারণত ডিফল্টভাবে চালু থাকলেও, একবার যাচাই করে নেওয়া ভালো:
১. আপনার ফোনের Settings (সেটিংস)-এ যান।
২. সেখানে Safety & Emergency (নিরাপত্তা ও জরুরি অবস্থা) অপশনে ক্লিক করুন। (কিছু ফোনে এটি Location > Earthquake Alerts অপশনের নিচেও থাকতে পারে)।
৩. Earthquake Alerts (ভূমিকম্প সতর্কতা) অপশনটি খুঁজে বের করে তা ‘ON’ করে দিন।
এই সুবিধা পেতে আপনার ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ (Wi-Fi বা মোবাইল ডেটা) এবং লোকেশন (GPS) সার্ভিস অবশ্যই চালু রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে না পারলেও, কম্পন শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের আগাম সতর্কতা মানুষকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে, যা দুর্যোগকালীন সময়ে জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


