টেকসিঁড়ি রিপোর্ট : উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২৪ ডিসেম্বর’২৫ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবার মানবৃদ্ধি, এর রেগুলেশন এবং রাষ্ট্রের সার্ভেইলেন্স কাঠামোতে গঠনমূলক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অধ্যাদেশের সংশোধনের মধ্যে নিন্মোক্ত প্রস্তাবগুলো রয়েছে:-
ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা কখনোই বন্ধ করা যাবে না এরকম বিধান রাখা হয়েছে (ধারা ৯৭)।
২০১০ সালের বিতর্কিত সংশোধনের কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির ক্ষমতা ও কার্যপরিধির মধ্যে ভারসাম্য আনা হয়েছে।
আগে সকল লাইসেন্স ইস্যুর অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে হলেও, এখন থেকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লাইসেন্স মন্ত্রণালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টাডির ভিত্তিতে অনুমোদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে ও অন্যান্য সকল লাইসেন্স ইস্যু করার এখতিয়ার বিটিআরসির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে একটি ‘জবাবদিহিতা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। লাইসেন্সের আবেদন থেকে শুরু করে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত সময় কমানো হয়েছে। এছাড়াও পূর্বের আইনে বর্ণিত উচ্চ জরিমানা, রিকারিং জরিমানা কমানো হয়েছে, যা টেলিযোগাযোগ খাতকে বিনিয়োগ বান্ধব করবে।
এখন থেকে প্রতি চার মাসে বিটিআরসিকে গণশুনানী করতে হবে, তার ফলোআপ ওয়েবসাইটে রাখতে হবে এবং কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট রোধেও বিধান রয়েছে। (ধারা ৮৭) সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে কোনো নাগরিককে নজরদারি বা অযথা হয়রানি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করা হয়েছে। (ধারা ৭১)
“Speech Offence” সম্পর্কিত নিবর্তনমূলক ধারা পরিবর্তন করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ধারাবাহিকতায় কেবল সহিংসতার আহ্বানকেই অপরাধের আওতাভূক্ত রাখা হয়েছে। (ধারা ৬৬ক)
টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে আপীল এবং সালিশ বিষয়ক ধারা রাখা হয়েছে। (ধারা ৮২খ) সেন্টার ফর ইনফর্মেশন সাপোর্ট প্রতিষ্ঠা’ (ধারা ৯৭ক)
আইনানুগ ইন্টারসেপশনের সংজ্ঞা এবং পরিধি স্পষ্টভাবে এবং সুবিস্তারে আইনে নির্ধারিত করা হয়েছে।
কেবল বিচারিক ও জরুরি আইনানুগ ইন্টারসেপশনের প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সেন্টার ফর ইনফর্মেশন সাপোর্ট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা বাধ্যতামূলকভাবে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খল, জরুরী প্রাণরক্ষার প্রয়োজনে, বিচারিক বা তদন্তের প্রয়োজন এবং আন্তঃসীমান্ত সংক্রান্ত কাজে সুনির্দিষ্ট কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে আইনানুগ ইন্টারসেপশন করতে পারবে। এই কাজ কেবল আইনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত নির্দিষ্ট কিছু সংস্থা, সেটিও কেবল নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে করতে পারবে।
‘সেন্টার ফর ইনফর্মেশন সাপোর্ট (CIS)’ এর মাধ্যমে রোল বেজড অ্যাক্সেস কন্ট্রোল (role based access control) ও আধা বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতীত ইন্টারসেপশন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
নতুন গঠিত CIS (Centre for information support) নিজে কোনও ইন্টারসেপশন পরিচালনা করতে পারবে না, এটি কেবল কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। (ধারা ৯৭ক) (More on the implications of this clause, like stopping political surveillance and abuse of surveillance/blackmailing) ‘সেন্টার ফর ইনফর্মেশন সাপোর্ট প্রতিষ্ঠা’র জন্য বর্ণিত সংশোধনের মাধ্যমে এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে (ধারা ৯৭ক)।
আইনানুগ ইন্টারসেপশনের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আধা-বিচারিক কাউন্সিল ও সংসদীয় তদারকির বিধান আনা হয়েছে। কাউন্সিলের নিকট বেআইনি ইন্টারসেপশন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যাবে।
আধা বিচারিক কাউন্সিল আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (সভাপতি), প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নিয়ে গঠিত হয়েছে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আইনানুগ ইন্টারসেপশন বিষয়ে প্রতি বছর একটি জাতীয় বার্ষিক প্রতিবেদন জনগণের নিকট প্রকাশ করবে যাতে ইন্টারসেপশনের ক্ষেত্রসমূহসহ বর্ণিত থাকবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতি বছর কার্যক্রম বাজেট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যাচাই করবে।
এছাড়াও, ইমেজ এবং ভয়েস প্রোটেকশন, সিম ডেটা এবং ডিভাইস ডেটা প্রোটেকশনের বিধান রাখা হয়েছে।
এই আইনের অধীন সকল ব্যবস্থাপনা জাতিসংঘ, আইটিইউসহ আন্তর্জাতিক উত্তম অনুশীলনের সহিত সামঞ্জস্য থাকবে।
উল্লেখ্য, অধ্যাদেশটি ২০ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগত অনুমোদন পায়। এরপর স্বরাষ্ট্র, অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজকের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তোলা হয়।



